ফাইল ছবি
গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এবং কর্মসংস্থান বাড়াতে গ্রামাঞ্চলে নতুন উন্নয়ন প্রকল্প শুরু করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। একইসঙ্গে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের হাতে থাকা চলমান প্রকল্পগুলো সংশোধন ও পরিমার্জনের পরিকল্পনা করছে সরকার।
কর্মসংস্থানের সুযোগ ক্রমেই কমে আসায় গ্রামাঞ্চলের অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে এগিয়ে নেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করার পর সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, 'এমনিতেই গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থানের অভাব রয়েছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য এসব অঞ্চলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ত্বরান্বিত করতে হবে।’
নতুন উন্নয়ন প্রকল্প তৈরি ও চলমান প্রকল্প এগিয়ে নেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন ড. ওয়াহিদউদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘দ্রুত নতুন প্রকল্প শুরু করতে হবে, না হলে বিদ্যমান প্রকল্পগুলো সংশোধন ও পরিমার্জনের মাধ্যমে এগিয়ে নিতে হবে।’
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বাজেট নিয়ে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য একটি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন করেছিল। এর মধ্যে ১ হাজার ১৩৩টি বিনিয়োগ প্রকল্প, ২১টি জরিপ প্রকল্প, ৮৭টি কারিগরি সহায়তা প্রকল্প এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও করপোরেশনের ৮০টি প্রকল্প রয়েছে।
এডিপি থেকে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া খাতগুলোর মধ্যে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ৭০ হাজার ৬৮৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা (২৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ), বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৪০ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা (১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ) এবং শিক্ষা খাতে ৩১ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা (১১ দশমিক ৩৬ শতাংশ) রয়েছে।
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য খাতের মধ্যে রয়েছে আবাসন, স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার, কৃষি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। সব মিলিয়ে শীর্ষ ১০ খাত পেয়েছে ২ লাখ ৪২ হাজার ৯৩ কোটি টাকা, যা মোট এডিপি বরাদ্দের ৯০ দশমিক ২৫ শতাংশ।
উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার এত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, উদ্বেগ হিসেবে রয়ে গেছে মূল্যস্ফীতি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, মূল্যস্ফীতির হার সেপ্টেম্বরে নেমে এসেছে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশে, যা ২০২৪ সালের আগস্টে ছিল ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কমেছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি আগস্টে ১১ দশমিক ৩৬ শতাংশ থেকে সেপ্টেম্বরে ১০ দশমিক ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে এবং একই সময়ে খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ থেকে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশে নেমে এসেছে।
গ্রামাঞ্চলেও মূল্যস্ফীতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। আগস্টে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০ দশমিক ৯৫ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বরে ১০ দশমিক ১৫ শতাংশে নেমেছে। শহরাঞ্চলেও মূল্যস্ফীতির পতন দেখা গেছে। ১০ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ থেকে কমে ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ হয়েছে।
মূল্যস্ফীতির চাপের পরিপ্রেক্ষিতে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক রেপো রেট ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশে নিয়ে এসেছে।
পূর্ববর্তী প্রশাসনের অনেক উন্নয়ন প্রকল্প রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল বলে উল্লেখ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জানিয়েছে চলমান প্রকল্পগুলো সংশোধনের প্রক্রিয়া চলছে, যা সময়সাপেক্ষ হতে পারে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকার প্রকল্পগুলোর মধ্যে অপ্রয়োজনীয় বা কম অগ্রাধিকার হিসেবে যাচাই করে স্বনির্ভর পর্যায়ে পৌঁছে গেলে বরাদ্দ বন্ধ করে দিচ্ছে। সম্পদ সুবিন্যস্ত করতে এবং উন্নয়নের উদ্যোগগুলো সফল করতে বৃহৎ প্রচেষ্টার একটি অংশ এটি।
ইউ