
সংগৃহীত ছবি
জুলাই আন্দোলনে শহীদ জসীম উদ্দিনের মেয়ে লামিয়ার ধর্ষণকারী এবং ধর্ষণ পরবর্তীতে আত্মহত্যা করতে প্ররোচনা দানকারী প্রত্যেককে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানিয়েছে নারীপক্ষ। রবিবার এক প্রতিবাদ বিবৃতিতে এ দাবি জানিয়েছে নারীপক্ষ।
বিবৃতিতে বলা হয়, ধর্ষণ এবং ধর্ষণ পরবর্তী লাঞ্ছনা-গঞ্জনার শিকার কিশোরী লামিয়া (১৭) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। গতকাল শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাত নয়টায় শেখেরটেক ৬ নম্বর রোডের বি/৭০ নম্বর বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে। পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার পাঙ্গাসিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে জুলাই আন্দোলনে শহীদ জসীম উদ্দিনের মেয়ে লামিয়া গত ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় তার বাবার কবর জিয়ারত শেষে নানাবাড়ি পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে যাচ্ছিলেন। পথে নলদোয়ানী থেকে তার পিছু নেয় সাকিব ও সিফাত নামে দুই যুবক। তারা হঠাৎ পেছন থেকে লামিয়ার মুখ চেপে ধরে পার্শ্ববর্তী জলিল মুন্সির বাগানে নিয়ে গিয়ে তাকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। এরপর ধর্ষণকারীরা তার নগ্ন ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ারও হুমকি দেয়।
প্রথমে পুলিশ অভিযোগ নিতে গড়িমসি করলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে অভিযোগ নিতে বাধ্য হয়। পরবর্তীতে দু’জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হলেও আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে তারা জামিনে ছাড়া পেয়ে যায় এবং মামলা তুলে নেওয়ার জন্য নানাভাবে চাপ সৃষ্টি ও ভয়ভীতি দেখাতে থাকে। অপরদিকে, ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন মাধ্যমে লামিয়ার বিরুদ্ধে অপপ্রচার, কটু মন্তব্য, চরিত্র হনন এবং সামাজিক লাঞ্ছনা-গঞ্জনা চলতেই থাকে। শারীরিক, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও সামাজিকভাবে অপদস্থ কিশোরী লামিয়া অবশেষে আত্মহত্যা করতেই বাধ্য হয়। এই ব্যর্থতা লামিয়ার নয়, এই ব্যর্থতার কারণ রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার অভাব ও সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা, অসাধু প্রভাব-প্রতিপত্তি ও দুর্নীতি, মানসিক সহায়তার জন্য কাউন্সেলিং সেবা না পাওয়া এবং সর্বোপরি ধর্ষণের শিকার নারীর প্রতি সর্বত্র অসংবেদনশীল আচরণ।
নারীপক্ষ’র দাবি, লামিয়ার ধর্ষণকারী এবং ধর্ষণপরবর্তীতে লাঞ্ছনা-গঞ্জনাকারী প্রত্যেককে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক বিচার করা হোক। আর যাতে একজন নারীকেও এভাবে জীবন দিতে না হয় তার জন্য পুলিশ প্রশাসনের গাফিলতি এবং অসাধু প্রভাব-প্রতিপত্তি ও দুর্নীতি বন্ধ করা, ধর্ষণের শিকার নারীকে রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা ও মানসিক সহায়তা প্রদান, আইনি সহায়তা ও বিচার প্রাপ্তি সহজ, সুগম ও নিশ্চিত করা এবং সামাজিক নিরাপত্তা বিধান ও সর্বত্র সকলকে সংবেদনশীল অচরণ করতে রাষ্ট্র ও সরকার কর্তৃক প্রয়োজনীয় সকল প্রকার কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হোক।
//এল//