ছবি সংগৃহীত
পরিবেশদূষণ এবং জলবায়ু বিপর্যয়ের ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে সৃষ্ট স্বাস্থ্যগত সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেলায় নগরবাসীর মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ‘বিপন্ন পরিবেশ বিবর্ণ ঢাকা : উত্তরণ ভাবনা’ বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (১০ জুন) বিকাল ৪টায় মহিলা পরিষদের উদ্যোগে রাজধানীর নিজস্ব কার্যালয়ে এ মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন নারীবাদি সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম।
কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করবেন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের স্থাপত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ড. নবনীতা ইসলাম। সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর সহ-সভাপতি স্থপতি ইকবাল হাবিব, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক শায়ের গফুর, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (অখজউ) এর নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবান ও রিজিওনাল প্ল্যানিং বিভাগের অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান এবং নিউ এইজ পত্রিকার সাংবাদিক রাশেদ আহমেদ।
লিখিত বক্তব্যে ড. নবনীতা ইসলাম বলেন, ‘বর্তমান সময়ের প্রতিবেশ ও পরিবেশগত বড় বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। পরিবেশ রক্ষা ও সংরক্ষণে নারীর ঐতিহাসিক ভূমিকা থাকলেও পরিবেশগত বিপর্যয় ও জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ শিকার হচ্ছেন নারী ও কন্যা। বর্তমানে ঢাকাতে অপরিকল্পিত নগরায়ণ, জলভূমি ও উন্মুক্ত স্থানের হ্রাস এবং শহরমুখী জনস্রোতের কারণে পরিবেশগত দূষণ (বায়ু, পানি এবং মাটি), শব্দ দূষণ ও অস্বাভাবিক মাত্রায় উষ্ণতা বাড়ায় নারী ও শিশুরা বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে। কম ওজনের শিশুর জন্ম হচ্ছে, অকাল প্রসব ও নবজাতকের মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিস্থিতি উত্তরণে জলবায়ু কর্মপরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়ন, সরকারের নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নকারী সংস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধন, জলবায়ু কর্মপরিকল্পনার মধ্যে বিভিন্ন কর্মকৌশল গ্রহণে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, বায়ুদূষণকারী পরিবহন সরিয়ে নেয়া, নির্বিচারে গাছ কেটে ফেলা বন্ধ করা এবং ইটভাটা ও কলকারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উপর জোর দেয়ার উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
সম্মানিত আলোচকবৃন্দ বলেন, পরিবেশ ও নগরের সঙ্গে নারীর সম্পর্ক সুপ্রতিষ্ঠিত। জলবায়ুগত পরিবর্তনে নারীরা অতিরিক্ত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন, ডেঙ্গুতে নারীদের আক্রান্ত হওয়ার হার কম হলেও তাদের মৃত্যুহার বেশি। নগরায়নের যে ট্রেন্ড দেখা যাচ্ছে তা বিধ্বংসী নগরায়ন। জলাশয়, জলভ’মি রক্ষার কথা দীর্ঘদিন ধরে বলা হলেও তা গুরুত্ব পাচ্ছে না। নগরে সবুজ বনায়নের পরিমাণ ৩০%- ৩৪% থাকার কথা বলা হলেও ঢাকা শহরে সবুজের পরিমাণ কমতে কমতে এখন ১০%। এর ফলে শিশু কিশোরদের উপর ঝুঁকিপূর্ণ স্বাস্থ্যগত প্রভাব পড়ছে, তারা সহিংস হয়ে উঠছে। নগরের সকল পরিবেশগত বিপর্যয় রোধ করতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরী,পাশাপাশি প্রকৃতির আইনকে মেনে চলতে হবে। ক্ষমতাশালীদের হাত থেকে নদী ও ভূমিকে রক্ষা করতে হবে। সরকারি নীতি নির্ধারণে নারীদের অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দিতে হবে। সাংবাদিকদের একটি গ্রুপ তৈরি করে অ্যাডভোকেসি কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে বলে বক্তারা অভিমত দেন। তারা এসময় বলেন পরিবেশগত বিপর্যয় উত্তরণে নারীবাদী আন্দোলন সার্বজনীন জ্ঞানের অসারতা, স্থান, কাল ও পাত্রের অবস্থিত জ্ঞান, জ্ঞান ও চর্চায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে বিবেচনা করাকে গুরুত্ব দিয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেন নারীরা। পরিবেশের সঙ্গে নারীর সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে একেক স্থানের আবহাওয়ায় ভিন্নতা রয়েছে। ঢাকার পরিবেশ অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় আছে যা নারী ও শিশুর স্বাস্থ্যের উপর বিরুপ প্রভাব তৈরি করছে। এই পরিস্থিতিতে ঢাকার পরিবেশগত বিপর্যয় মোকাবেলায় পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন আজ সময়ের দাবি।
স্বাগত বক্তব্যে অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম বলেন, বাংলাদেশে পরিবেশগত যে বিপর্যয় হচ্ছে এতে নারীরা ও শিশুরা বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। ঢাকা আজ অপরিকল্পিত নগরী হয়ে উঠেছে, বনায়ন নেই, অতিরিক্ত জনসংখ্যার জন্য জনবিস্ফোরণ ঘটেছে এর ফলে পরিবেশগত দূষণ হচ্ছে এর প্রভাব জনজীবনে পড়ছে। তিলোত্তমা ঢাকা গঠনের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। ঢাকাকে সবুজ নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে ও পরিবেশগত সকল বিপর্যয় রোধে করণীয় নির্ধারণ করার লক্ষ্যে আজকের সভার আয়োজন।
সভায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির নেতৃবৃন্দ, সম্পাদকমন্ডলী, কর্মকর্তাবৃন্দ এবং সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভা সঞ্চালনা করেন সংগঠনের পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক পারভীন ইসলাম।
ইউ