ঢাকা, বাংলাদেশ

বৃহস্পতিবার, অগ্রহায়ণ ৬ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪

English

বৃত্তের বাইরে

‘নিজেকে সীমাবদ্ধ না রেখে আত্মবিশ্বাসে এগিয়ে চলুন’

মাহফুজা বেগম

প্রকাশিত: ১৮:৪৭, ৩০ অক্টোবর ২০২৩

‘নিজেকে সীমাবদ্ধ না রেখে আত্মবিশ্বাসে এগিয়ে চলুন’

ছবি সংগৃহীত

বিয়ের পর থেকে একটা কথা বার বার  শুনেছি, ‌‌‘তোমার মতো কালো মেয়েকে কেউ বিয়ে করতো না আমি বলে তোমাকে বিয়ে করেছি। তোমার মা বিয়ে দিতে পারছিলেন না তাই আমার কাছে গছিয়ে  দিয়েছেন।’ এই কথাগুলো শুনতে শুনতে নিজের মধ্যে একটা কষ্ট হতো আর নিজের আত্মবিশ্বাসটা চলে গিয়েছিল। মনে হতো আমি দেখতে খুব অসুন্দর।

অথচ একসময় আমার জন্য অনেক ছেলেই পাগল ছিল। আমার স্বামীর কথা শুনতে শুনতে মনে হত আমাকে কোনো ছেলে পছন্দ করতেই পারে না, সব ছিল মিথ্যা। আমার বাবা আর ভাই না থাকাতে আমাকে বিয়ে দেয়ার মতো আমার কোন গারডিয়ান ছিল না। আমার বিধবা মায়ের জন্য তাই আমাকে বিয়ে দেয়া ছিল কিছুটা কষ্টের।

এক সময় আমার ছেলে হল। ছেলেকে মানুষ করা আর সংসারের সব কাজ করতে করতে নিজের চেহারা আর নিজের স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখার কথা ভুলে গেলাম। দিনে দিনে আরো খারাপ হতে লাগল আমার চেহারা। তবে ছোটবেলায় একটা জিনিসটা আমার খুব পছন্দের ছিল সেটা হল সাজগোজ করা। তাই বাইরে বের হলে সাজগোজ করে বের হতাম। তখন হয়তো দেখতে খারাপ লাগতো না।

ছেলে বড় হতে লাগলো, তখন আমার স্বামী ছেলেকে শিখাতে লাগলো তোর মা তো কালো, কোন কাপড়েই মানায় না। কোন জামা অথবা শাড়ি আমার পছন্দের কোন রংয়ের কিনতে চাইলে  বলতো, ‘এটা কি তোমাকে মানাবে?" কারণ আমার গায়ের রংটা কালো। এই কথাটা বোঝানোর চেষ্টাই ছিল তার উদ্দেশ্য। মনটা খারাপ হলেও কিছুই বলতে পারতাম না।

ছেলে যখন কথা বলতে শুরু করলো। তখন ছেলে আর বাবা মিলে সুর করে কালী কালী কালী বলে গান ধরতো আমাকে শোনানোর জন্যে প্রতিদিন। আমার ছোট ছেলে তো বুঝতে পারতো না সেও সুর মেলাতো। মনে মনে খুব কষ্ট লাগতো আর চোখের কোনে জমতো কষ্টের অশ্রুবিন্দু ।

আমি খুব সহজ সরল স্বভাবের মানুষ তাই আমার কষ্টের কথাগুলো সুন্দর করে অন্য কোনোভাবে নিজের স্বামীকে বোঝাতে পারতাম না। আমাকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করা তার স্বভাবে পরিণত হয়ে উঠে, আমি লজ্জায় ছোট থেকে ছোট হতে থাকি। সে আমাকে বোঝাতে থাকে আমাকে দিয়ে কিছু হবে না কারণ আমার বুদ্ধিসুদ্ধি একটু কম। আমি ও ভাবতে থাকি তাই। সংসার ছেড়ে যাওয়ার যায়গা তো নেই। মন খারাপ করে থাকা ছাড়া আর কি করতে পারি।

অথচ আমি একটা নামকরা স্কুলের শিক্ষিকা। ভাল বেতনে চাকরি করি সংসারের সব কাজ করি আর আমার টাকায় সংসারের অর্ধেক খরচ চালাই। স্কুলে যখন যাই আমার কলিগরা আমার রুচির প্রশংসা করে। মাঝে মাঝেই বলে, ‘সীমা তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।’ আমি হাসি আর ভাবি আমাকে কীভাবে সুন্দর লাগতে পারে আমি তো কালো।

এভাবেই জীবন কেটে যাচ্ছিল। একদিন ফেসবুকে আমাকে একজন বিদেশী আর্টিস্ট ফ্রেন্ড  রিকোয়েষ্ট পাঠায়। আমার হ্যাজবেন্ড সব সময়ই বলতো বিদেশীরা কখনোই ভাল হয় না তাদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট কখনোই একসেপ্ট করবে না। তাই আমি খুব ভয় পেতাম। আর আমি তখন তার নাম গুগলে সার্চ করলাম । দেখলাম সে খুব একজন নামকরা আর্টিস্ট। তখন আমি তার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট না করে তার সঙ্গে শুধু চ্যাটিং করা শুরু করলাম এবং তার সাথে শিল্প আর সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করতে লাগলাম। আর এটাও জানালাম আমার খুব ভাল ছবি আঁকার ইচ্ছা এবং আমি একজন ভাল লেখক ও ভাল আর্টিস্ট হতে চেয়েছিলাম কিন্ত সংসারের জন্য সব ছেড়ে দিয়েছি। সে আমাকে বোঝাতে লাগলো যেন আমি আবারো ছবি আঁকা শুরু করি। এবং আমি তাই করতে লাগলাম। তার অনুপ্রেরণা আর উৎসাহে পুরো দমে ছবি আঁকা শুরু করলাম। এক একটা কাজ করতাম আর তার পরামর্শ নিতাম। আমার করা প্রথম পেইন্টিংটা বিক্রি হয়ে যায়। তখন দ্বিগুন উৎসাহে নতুন নতুন ছবি আঁকা শুরু করলাম। পরবর্তীতে যখন আরেকটা একজিবিশনে নেপালে গেলাম আর ওখান থেকে আমার সবগুলো পেইন্টিং বিক্রি হয়ে গেল। আমি আর পিছনে ফিরে তাকাইনি একের পর এক ছবি বিক্রি আর একজিবিশন করছি এখন।

আমার ধারণা ছিল আমি খুব কালো আমার এই বিদেশী বন্ধু আমাকে বোঝাতে লাগল যে ,আমাদের এই দেশে তোমার মতো ব্রাঊন স্কিন টোন পাওয়ার জন্য আমাদের দেশের মেয়েরা কত টাকা খরচ করে আর সান বাথ করে তুমি কি জানো? তুমি নিজেকে নিয়ে ভুল ভাবছো। সব কিছু বাদ দাও। তুমি দেখতে খুব সুন্দর। নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি করো আর নিজের শিল্পকর্মে মনোযোগী হও।

জীবনের পঁয়তাল্লিশটা বছর ভুল ভেবে সময় নষ্ট করছি। এই শেষ বয়সে এসে আমার বিদেশী বন্ধুর সহায়তায় নিজের আত্মবিশ্বাস ফিরে পেলাম। ছবি আঁকছি আর লেখালেখি করছি মাত্র তিন বছর এর মধ্যেই আমাকে সবাই চেনে আর দেশে বিদেশে প্রায় চল্লিশটির মতো একজিবিশন করেছি এই আমি সীমা। যদি না আমার এই ফেসবুক বন্ধুর সঙ্গে দেখা  হতো আজকে হয়তো এই বোকা মেয়েটা নিজের কালো রংয়ের জন্য নিজেকে দোষী ভাবতো আর বন্দি পরে থাকতো সংসারের চার দেয়ালে।

তাই জগতের সব নারীকে বলি নিজেকে সীমাবদ্ধ না রেখে নিজের আত্মবিশ্বাসে এগিয়ে চলুন জয় আপনার হবেই। আপনার পরিচয় আপনার সৌন্দর্যে নয়, আপনার কর্মে আর আপনার সাফল্যে।

ইউ

চিফ প্রসিকিউটরের বিশেষ পরামর্শক নিয়োগ পেলেন টবি ক্যাডমান

কাল্পনিক চরিত্রের সঙ্গে ৬ বছরের সংসার যুবকের!

ইসরায়েলকে রক্ষায় জাতিসংঘে ৪৯ বার ভেটো যুক্তরাষ্ট্রের!

পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা নামল ১৪ ডিগ্রিতে

রাজধানীতে আজও অটোরিকশা চালকদের সড়ক অবরোধ

এবার ভাইরাল কলার শিল্পকর্ম বিক্রি হলো ৬২ লাখ ডলারে

সেনাকুঞ্জে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া

শিখা অনির্বাণে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা

সশস্ত্র বাহিনী দিবসের কর্মসূচি শুরু

ইসলামী ব্যাংকের শরী‘আহ সুপারভাইজরি কমিটির সভা

‘খাল বাঁচলেই বাঁচবে নগর’ শীর্ষক স্কুলভিত্তিক সচেতনতামূলক কর্মসূচি

নতুন আইজিপি বাহারুল, ডিএমপি কমিশনার সাজ্জাদ

রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের বিধান থাকছে না ট্রাইব্যুনাল আইনে

ভারতে দুই রাজ্যের নির্বাচন, জনপ্রিয়তার পরীক্ষায় মোদি

বাংলাদেশে বছরে ১২-১৮টি এলএনজি কার্গো রপ্তানির প্রস্তাব ব্রুনাইয়ের