ছবি: সংগৃহীত
নড়াইলের লোহাগড়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রতিবাদে দেশের ৬৬টি নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের প্ল্যাটফর্ম সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি আজ, ১৮ জুলাই ২০২২, সোমবার, বিকেল ৪টায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন করে। মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম।
সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো নারীবাদি সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এ নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে স্বপ্নময় বিনির্মাণ আমরা করেছিলাম সাম্প্রদায়িক সংহিসতার মাধ্যমে তা ধংস হচ্ছে। দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর একের পর এক সহিসংতার ঘটনা ঘটলেও ঘটনার পেছনে যারা আছেন তাদের চিহ্নত করা যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালনের শিথিলতা রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখার দাবি জানান তিনি। পাশাপাশি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত না করে ডিজিটাল নিরাপত্ত আইনসহ অন্যান্য আইন বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সাম্প্রদায়িক সহিসতার মতো যে সব ঘটনা রাষ্ট্রের নীতির বিরুদ্ধে সেগুলো জাতীয় সংসদে আলোচনা করা এবং জনগণের জানমাল রক্ষায় সরকারে দায়বদ্ধতা প্রমাণের আহ্বান জানান তিনি।
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় ফেইসবুকে দেয়া একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে সেখানকার হিন্দু সম্প্রদায়ের শতাধিক ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও মন্দিরে হামলা এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নারীবাদি সংগঠন নারীপক্ষ উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের উপপরিচালক শাহনাজ সুমি, একশন এইড বাংলাদেশের প্রতিনিধি তুহিন আক্তার, গণ সাক্ষরতা অভিযানের রেহানা বেগম, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাহিদা পারভিন শিখা, কর্মজীবী নারী থেকে বেলাল হোসেন, আইইডির সঞ্চিতা তালুকদার, নারী মুক্তি সংসদের শিউলি তালুকদার এবং বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু।
এছাড়াও ব্লাস্ট, উইমেন ফর উইমেন, দীপ্ত ফাউন্ডেশন ও নারী সাংবাদিক কেন্দ্র মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে।
নরাইলের লোহাগড়াসহ সারা দেশে কখনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা ধর্ম অববামানার অভিযোগ, কখনো শিক্ষককে ধর্মঅবমানার দায়ে গ্রেফতার ও হয়রানী কিংবা জুতার মালা পড়ানো, অসাম্প্রদায়িক চিন্তার ব্যক্তিবর্গের উপর হামলার মতো একের পর এক ন্যাক্কারজনক সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ, লজ্জা ও ঘৃণা প্রকাশ করে আলোচকগণ বলেন, স্বাধীনতার ৫২ বছরেও আমারা স্বাধীন হতে পারিনি। একের পর এক সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় রাষ্ট্র, সরকার, প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা বাহীনীর নীরব ভূমিকা জনমনে নানান প্রশ্নের জন্ম দেয়। দিনের পর দিন বিচারহীনতার ফলে উগ্র সাম্প্রদায়িক জনগোষ্ঠী আরও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব, রাষ্ট্র তার দায়িত্ব পালনে অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে।
এছাড়াও বক্তারা, বিচারহীনতার সংস্কৃতি বন্ধ করা, সকল নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, প্রকৃত অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা, উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর মুখোশ উম্মোচন করা, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জবাবদিহীতার আওতায় আনাসহ সরকারকে যথাযথ দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, এই ধরনের অবাঞ্চিত প্ররোচনা আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিনষ্ট করে, সমাজে সম্প্রীতির বিঘ্ন ঘটায়। যা ইতোমধ্যে শিক্ষা, সংস্কৃতি, মানবতা, অসাম্প্রদায়িক চেতনা, এর উপর বিরুপ প্রভাব ফেলছে।
বিবৃতিতে ঘটনার প্রকৃত অনুসন্ধান ও সুষ্ঠু তদন্ত করে অপরাধীদের খুঁজে বের করার পাশাপাশি এবং মুল হোতাসহ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্থির ব্যবস্থা নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়।
//জ//