ঢাকা, বাংলাদেশ

বৃহস্পতিবার, অগ্রহায়ণ ৬ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪

English

বৃত্তের বাইরে

নারী আন্দোলনের ইতিহাস

প্রকাশিত: ০০:০০, ২৭ নভেম্বর ২০২১; আপডেট: ১৬:২৪, ৬ জুলাই ২০২২

নারী আন্দোলনের ইতিহাস

নারী আন্দোলনের ইতিহাস

উইমেনআই২৪ ডেস্ক: বিভিন্ন নৃ-তাত্ত্বিক এবং দার্শনিকদের গবেষণায় দেখা যায়, সমাজ এক সময় মাতৃতান্ত্রিক ছিল। বর্তমানে পুরুষরা সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করছে। তেমনই আদিম যুগের বড় সময়জুড়ে নারীরা সমাজ নিয়ন্ত্রণ করত। ওই সমাজকে মাতৃতান্ত্রিক সমাজ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ফ্রেডরিক এঙ্গেলসের পরিবার, ব্যক্তিগত মালিকানা ও রাষ্ট্রের উৎপত্তি এবং হেনরি লুই মর্গানের আদিম সমাজসহ আরো বিভিন্ন গ্রন্থে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা দেখা যায়। 

এঙ্গেলসের ভাষ্য অনুযায়ী, ১৮৬০ সালের আগে নারী বা পরিবার নিয়ে ইউরোপে কোনো গবেষণা হয়নি। আদিমকালে সমাজ উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় মানুষ এক সময় সভ্য জগতে প্রবেশ করে। সভ্য সমাজের পূর্বে বড় সময়জুড়ে মানুষ প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করে অস্তিত্ব রক্ষা করে। ওই সময় কার্যত নারী-পুরুষের মধ্যে খুব একটা বিভক্তি ছিল না। 

মর্গানের মতে, নারী-পুরুষ দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে পরিবার বিকশিত হয়েছে। আদিম যুগে দেখা যায়, নারী-পুরুষের যৌন সম্পর্কে বিধি-নিষেধ ছিল না। এই কারণে, সন্তানের পিতৃ পরিচয়ও ছিল না।

ঐতিহাসিকদের ধারণা অনুযায়ী, অনেক দিন পর্যন্ত পুরুষরা সন্তান উৎপাদনের কারণ সম্পর্কে জানত না। ফলে পুরুষের পক্ষে সন্তানের কর্তৃত্ব নিয়ে চিন্তার সুযোগ ছিল না। নারীর পরিচয়ে সন্তান বড় হত। পাশাপাশি, একই সময় কৃষি নিয়ন্ত্রণ করত নারীরা। সন্তান জন্ম ও লালনের সময় পুরুষের সাথে নারী শিকারে যাওয়া থেকে বিরত থাকত। ওই অবসরে সে কৃষিকাজ আবিষ্কার করে। আহরিত ফলমূলের বীজ থেকে যে শস্য উৎপাদিত হয়, তা প্রথম নারীই খেয়াল করে। ফলে মানব ইতিহাসে কৃষিকাজ নারীর হাত ধরে বিকশিত হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায়, নারী দীর্ঘদিন কৃষি নিয়ন্ত্রণ করত। কারণ, ওই সময় পুরুষরা শিকারে ব্যস্ত থাকত। এরও অনেক কাল পরে মানুষের শ্রম বিভাজনের ঘটনা ঘটে। 

জার্মান মতাদর্শ-তে মার্কস এবং এঙ্গেলস বলছেন, মানুষের ইতিহাসে নারী এবং পুরুষের কাজের পরিধি নিয়ে প্রথম শ্রম বিভাজনের সূত্রপাত। পাশাপাশি প্রথম যে শ্রেণি নিপীড়ন সেটাও নারী এবং পুরুষের মধ্যে। একে আখ্যায়িত করা হয়েছে শ্রমের প্রথম মহান বিভাজন-হিসেবে। শ্রম বিভাজনে দেখা যায়, উৎপাদন এবং পুনরুৎপাদনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নারী-পুরুষের কাজ পৃথক হয়ে যায়। মানুষের বেঁচে থাকার অন্যতম প্রধান শর্ত হচ্ছে উৎপাদন। খাওয়া-দাওয়া, সম্পদ এবং আশ্রয়ের জন্য মানুষকে উৎপাদনে যুক্ত থাকতে হয়। আর এই উৎপাদন প্রণালীর নিয়ন্ত্রণ পুরুষের হাতে চলে যায়। 

অন্যদিকে পুনরুৎপাদনের জন্য নারীরা গৃহে আবদ্ধ হয়ে যায়। পুনরুৎপাদন বলতে সন্তান জন্ম দেয়াকে বুঝানো হয়ে থাকে। সন্তানের লালন পালনও এর সাথে যুক্ত। যা হোক, উৎপাদন কর্মকাণ্ডের ভার দীর্ঘ এক প্রক্রিয়ায় পুরুষের হন্তগত হওয়ার মাধ্যমে নারীর ঐতিহাসিক পরাজয় সূচিত হয়। হাজারো বছর ধরে এ পরাজয়ের বিরুদ্ধে নারীর অবস্থান দেখা যায়নি। মূলত ইউরোপজুড়ে যখন রেনেসাঁসের উদ্ভব, তখন নারীকে অধিকারের দাবিতে স্বল্প পরিসরে অবস্থান নিতে দেখা যায়। নারী দিবসসহ আরো বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে আজকের নারী তার অধিকারের ক্ষেত্রে অনেক বেশি সচেতন। কিন্তু, তা একদিনে পরিণতি লাভ করেনি। পেছনে রয়েছে দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস। 

নারী আন্দোলনের উদ্ভব ও বিকাশ ১৭৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের সাম্য-মৈত্রী-স্বাধীনতার আহ্বান বিশ্বব্যাপী নারী কর্মীদের কাছে অভূতপূর্ব সাড়া ফেলে। কিন্তু, ফরাসি বিপ্লবের পরও নারীর প্রত্যাশিত মুক্তি আসেনি। ১৭৯১ সালে ফরাসি নাট্যকার ও বিপ্লবী ওলিম্পে দ্যা গগ্স  ‘নারী অধিকার এবং মহিলা নাগরিকদের ঘোষণা প্রকাশ করেন। এতে তিনি বলেন, নারী জেগে উঠো; গোটা বিশ্বে যুক্তির সঙ্কেত ধ্বনি উচ্চারিত হচ্ছে। তোমার অধিকারকে আবিষ্কার করো। প্রকৃতির শক্তিশালী সাম্রাজ্য এবং পক্ষপাত, গোঁড়ামি, কুসংস্কার ও মিথ্যা দিয়ে অবরুদ্ধ নয়। সত্যের শিখা পাপ ও অন্যায় দখলের মেঘকে দূর করে দিয়েছে। 

নারীবাদকে প্রথম সংগঠিত করেন ইংল্যান্ডের মেরি ওলস্ট্যানক্রাফট। তিনি ছিলেন একাধারে লেখক, দার্শনিক এবং নারীবাদী। ১৭৯২ সালে তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘নারী অধিকারের ন্যায্যতা‘ প্রকাশিত হয়। ১৭৯৩ সালে এ নারীকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়। সাথে সাথে নারীর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হয়। মৃত্যু পূর্বে অসীম সাহসিকতা নিয়ে তিনি বলেন, নারীর যদি ফাঁসি কাষ্ঠে যাবার অধিকার থাকে, তবে পার্লামেন্টে যাবার অধিকার থাকবে না কেন?  এ গ্রন্থে তিনি নারীদের উপর পুরুষতন্ত্রের নিপীড়নের ব্যাপারে বিস্তারিত তুলে ধরেন। 

বইয়ের মূল বক্তব্য হচ্ছে, নারী কোন ভোগের সামগ্রী বা যৌন জীব নয়। তারা বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ। তাই তাদের স্বাধিকার দিতে হবে। ১৮৪৮ সালের ১৯-২০ জুলাই নারীবাদীদের উদ্যোগে নিউইয়র্কের সেনেকা ফলস-এ বিশ্বের প্রথম নারী অধিকার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আমেরিকার ঘোষণার অনুরূপ ডিকারেশন অব সেন্টিমেন্ট ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে আমেরিকার সংগ্রামী নারীদের লড়াই-সংগ্রাম নারীবাদী চেতনাকে আরো ত্বরান্বিত করে। বিভিন্ন দেশে সমসাময়িক আন্দোলন ১৮৭১ সালে ফ্রান্সের শ্রমজীবী জনগণ প্রথম সাম্যবাদী সমাজ নির্মাণের উদ্দেশ্যে প্যারি কমিউন প্রতিষ্ঠা করেন। এ আন্দোলনে হাজার হাজার শ্রমজীবী নারীর অংশগ্রহণ নারীবাদকে নতুন গতি দেয়। 

প্যারি কমিউন রক্ষার্থে ১০ হাজার নারী যুদ্ধে অংশ নেয়। পরবর্তীতে, প্যারি কমিউন পতনের পর যুদ্ধ পরিষদ ১০৫১ জন নারীকে অভিযুক্ত করে। এদের মধ্যে লুই মিচেল এবং এলিজাবেথ ডিট্রিভের নাম ইতিহাসে বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে আছে। 

উল্লেখ্য, একজন মানুষ হিসেবে নারীর পূর্ণ অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে দেশে দেশে উদার, গণতান্ত্রিক মানসিকতা সম্পন্ন মহৎ পুরুষরাও যুক্ত হন। ১৮৬৬ সালে দার্শনিক ও আইনজ্ঞ জন স্টুয়ার্ট মিল নারী অধিকারে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নেন। স্টুয়ার্ট মিল ব্রিটেন পার্লামেন্টের সদস্য হবার পর নারীর ভোটাধিকারের পক্ষে জোরালো যুক্তি তুলে ধরেন। ১৮৬৯ সালে ভোটাধিকারসহ অন্যান্য প্রসঙ্গ নিয়ে তিনি ‘নারীর অধীনতা’ রচনা করেন। 

ভারতবর্ষে নারী আন্দোলন নারী আন্দোলনের পিছনে যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিদ্যমান তা হলো দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পাওয়ার ইচ্ছায়। বৈশ্বিক পটভূমিতে যেমন একথা সত্য তেমনই বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। বাংলার নারীরা সুপ্রাচীনকাল থেকেই নিপীড়িত ও নিগৃহীত হয়ে আসছে। ধর্মীয় কুসংস্কার, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি নারীকে গৃহের অভ্যন্তরে অন্তরীণ করে রেখেছে। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সর্বক্ষেত্রেই নারীরা উপেক্ষিত। তবে ব্যক্তিপর্যায় কিছু নারী তাদের কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতি পেয়েছিল বটে, যেমন- রাজশাহীর রানী ভবানী ও ঝাসীর রানী লক্ষ্মীবাঈ, চট্টগ্রামের প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার প্রমুখ। তবে সাধারণ নারীর পক্ষে তাদের মতো স্বীকৃতি পাওয়া ছিল দুরূহ ব্যাপার। উনিশ শতকের শুরুতে বাংলায় নারীমুক্তি আন্দোলন শুরু হতে থাকে। বিশেষ করে এ সময় বাংলার রেনেসাঁ বা নবজাগরণের মানবিক আবেদন থেকে নারীর সামাজিক নিপীড়ন বন্ধের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। পরে নারী আন্দোলনের ইতিহাস বাংলার রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে যুগপৎভাবে অগ্রসর হয়। এ সময় বিশেষ করে অসহযোগ আন্দোলন, জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে নারীরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। এভাবে বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছে দেশপ্রেমের মধ্য দিয়ে। বিদেশি শাসক ও শোষকদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করার সংগ্রামে এদেশের নারীসমাজ বিশ শতকের শেষ পর্যন্ত এসে যুক্ত হয়েছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ও সামরিক শাসন উচ্ছেদের লড়াইয়ে। 

রাজা রামমোহন রায় (১৭৭২-১৮৩৩), ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮২০-১৮৯১), মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮১৭-১৯০৫) প্রমুখ সামগ্রিকভাবে সমাজ পরিবর্তনের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। নতুন যুগ ও নতুন আদর্শের ভিত্তিতে সমাজ গড়ে তোলার জন্য তারা যে কাজ করে গেছেন তার একটি অংশ ছিল নারীর সামাজিক নিপীড়ন বন্ধ করা ও নারীকে শিক্ষিত করে আত্মনির্ভরশীল হতে সাহায্য করা। উনিশ শতকের বাংলায় নবজাগরণের সঙ্গে নারী জাগরণের সম্পর্ক এভাবেই অবিচ্ছেদ্য হয়ে আছে। বাংলাদেশে নারী আন্দোলনের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়া। তৎকালীন পিছিয়ে পড়া মুসলিম সমাজে নারীশিক্ষা, অধিকার সুরক্ষায় নারীর আত্মসচেতনতা, নারীকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াস ইত্যাদি ক্ষেত্রে বেগম রোকেয়া তার সাহিত্য ও সক্রিয় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বাংলায় নারীমুক্তির আন্দোলন শুরু করেন। নারীবাদ প্রতিষ্ঠার বেগম রোকেয়ার দেখানো পথ ধরে স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের সার্বিক ক্ষেত্রে নারীর সফলতা লক্ষণীয়। নূরজাহান বেগম, বেগম সুফিয়া কামাল, বেগম শামসুন নাহার মাহমুদ, হেনা দাস, সালমা সোবহান প্রমুখ নারীনেত্রী নারীমুক্তির লক্ষ্যে বিশেষ অবদান রেখেছেন।

 

উইমেনআই২৪//এলআরবি//

কাল্পনিক চরিত্রের সঙ্গে ৬ বছরের সংসার যুবকের!

ইসরায়েলকে রক্ষায় জাতিসংঘে ৪৯ বার ভেটো যুক্তরাষ্ট্রের!

পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা নামল ১৪ ডিগ্রিতে

রাজধানীতে আজও অটোরিকশা চালকদের সড়ক অবরোধ

এবার ভাইরাল কলার শিল্পকর্ম বিক্রি হলো ৬২ লাখ ডলারে

সেনাকুঞ্জে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া

শিখা অনির্বাণে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা

সশস্ত্র বাহিনী দিবসের কর্মসূচি শুরু

ইসলামী ব্যাংকের শরী‘আহ সুপারভাইজরি কমিটির সভা

‘খাল বাঁচলেই বাঁচবে নগর’ শীর্ষক স্কুলভিত্তিক সচেতনতামূলক কর্মসূচি

নতুন আইজিপি বাহারুল, ডিএমপি কমিশনার সাজ্জাদ

রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের বিধান থাকছে না ট্রাইব্যুনাল আইনে

ভারতে দুই রাজ্যের নির্বাচন, জনপ্রিয়তার পরীক্ষায় মোদি

বাংলাদেশে বছরে ১২-১৮টি এলএনজি কার্গো রপ্তানির প্রস্তাব ব্রুনাইয়ের

ঢাকা ও সিটি কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া