
সংগৃহীত ছবি
সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর সক্রিয় ও কার্যকর অংশগ্রহণ ও স্বাধীন মতামতে ১১টি দাবি উত্থাপন করেছে 'আন্তর্জাতিক নারী দিবস কমিটি'র ৫৫ টি সংগঠন।
আজ শুক্রবার (৭ মার্চ ) জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে সকাল ১০টায় 'আন্তর্জাতিক নারী দিবস কমিটি'র আয়োজনে ‘আমাকে ছাড়া আমার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নয়’প্রতিপাদ্যে 'আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ উদযাপন উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে আয়োজকরা এ দাবি উত্থাপন করেন। আলোচনায় অংশ নেন সমন্বয়ক নারীপক্ষের তামান্না খান, মাহীন সুলতান, বহ্নিশিখার তাসফিক হোসেইন, শক্তি ফাউন্ডেশনের নিলুফা বেগম, ডরপ এর জেন্ডার ওয়াচ কমিটির ভাইসচেয়ার ডা. সিলভানা ইশরাত প্রমুখ। সবুজের অভিযানের মাহমুদা বেগম ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৫’ এর ঘোষণা পত্র পাঠ করেন।
এগারটি দাবির মধ্যে রয়েছে - নারীর উপর যেকোনো ধরনের সংঘবদ্ধ সহিংসতা বন্ধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া, সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, দাপ্তরিক বা অধিকারভিত্তিক কমিটি, রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নারীর সমান উপস্থিতি ও কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, জুলাই অভ্যুত্থানের নারী যোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া। নারী, কন্যাশিশু, আদিবাসী, প্রতিবন্ধী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও লিঙ্গবৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জাতিগত, লিঙ্গভিত্তিক, সাম্প্রদায়িক ও সংঘবদ্ধ সহিংসতা বন্ধ এবং মৌলবাদী ও উগ্রবাদী গোষ্ঠির বিস্তার রোধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। ধর্ষণ, যৌতুক, যৌননিপীড়ন ও উত্ত্যক্তকরণ এবং নারীর প্রতি সহিংসতাবিরোধী প্রচলিত আইনসমূহ নারীর বৈচিত্র্যময় জীবন ও বাস্তব অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে সর্বোচ্চ স্বার্থ ও সম-অধিকার বিবেচনায় সংশোধন ও পরিমার্জন করা। আদিবাসী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, প্রতিবন্ধী, গৃহকর্মী, তৈরী পোষাক কর্মী এবং অন্যান্য অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত নারী ও প্রবাসী নারীদের সর্বোচ্চ স্বার্থ নিশ্চিত করা। প্রতিবন্ধী নারীর জন্য গণপরিবহন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান ও বিচারব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ প্রবেশগম্য করা এবং বিশেষ সহায়তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা। প্রতিটি জেলায় ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার, নারীসহায়তা ও তদন্ত বিভাগ, কাউন্সেলিং, সাইবার সাপোর্ট ও পুনর্বাসন ব্যবস্থা চালু করা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নারীবিদ্বেষী কার্যক্রম ও প্রচার নিষিদ্ধ করতে সাইবার আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ নিশ্চিত করা। নারীর উপর সহিংসতা বিরোধী আইন, নারীর অধিকার ও সহায়তা সংক্রান্ত সকল ব্যবস্থা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামে বয়সভিত্তিক জেন্ডার সংবেদনশীলতা ও ইতিবাচক যৌনশিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা।
বক্তারা বলেন, নারীকে ছাড়া কোনোভাবেই নারীর বিষয়ে কোনরকম সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না, অর্থাৎ তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রতিটি ক্ষেত্রে তার সম্পূর্ণ অংশগ্রহণ এবং স্বাধীন মতামত প্রদানের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
নারীর ব্যক্তিগত জীবনে খাওয়াদাওয়া, চলাফেরা, পোশাকপরিচ্ছদ, খেলাধুলা, পড়ালেখা, চাকুরি বা পেশা, বিয়ে কিংবা বিয়েবিচ্ছেদ, আবাসনসহ সবকিছুর সিদ্ধান্তই নেয় তার পুরুষ অভিভাবক । জাতীয় বা রাষ্ট্রীয় জীবনের সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণের ক্ষেত্রে নারীর নিজের কার্যকর অংশগ্রহণ, মতামত প্রদান বা ভূমিকা রাখার তেমন কোন সুযোগই থাকে না, অর্থাৎ নারীর জীবনের প্রতিটি পর্যায়েই তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে অন্য কেউ। বলা যায়, তার উপরে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া হয় এবং ছলে-বলে-কৌশলে তা তাকে মানতে বাধ্য করা হয়। ধরেই নেয়া হয়, সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য যথেষ্ট যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানবুদ্ধি নারীর নেই। যা শুধু নারীরই নয়, সমগ্র দেশ ও জাতির অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করে।
বক্তারা বলেন, নারীর মুক্তি, ক্ষমতায়ন ও অধিকার কেবল কাগজে, শ্লোগানে বা বক্তৃতায় থাকলে হবে না, এর প্রকৃত বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ পারিবারিক, সামাজিক এবং জাতীয় পর্যায়ের প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতিটি স্তরে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি, বয়স নির্বিশেষে সকল নারীর জন্য। আমরা সমস্বরে জোর আওয়াজ তুলি, "আমাকে ছাড়া আমার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নয়।"
তামান্না খান বলেন, নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য দূর করতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, নারীপক্ষ, বহ্নিশিখা একযোগে কাজ করছে।
মাহীন সুলতান বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা চলমান, অন্তবর্তী সরকারের আমলেও একই ঘটনা ঘটছে। আমাদের প্রত্যাশা ছিল সকলের দাবিতে অন্তবর্তী সরকার এসেছে। এসময়ে এধরনের ঘটনা ঘটবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ঘটনাটি মেয়েটির সাথে ঘটেছে, এর প্রতিবাদ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন উদ্যোগ নিয়েছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে। এটা আমাদের আশাবাদী করে। কিন্তু পরবর্তীতে সামাজিকভাবে মেয়েটিকে যেভাবে লোকটি হয়রানি করেছে, উত্তেজিত করেছে, সমাজ সেই লোকটির প্রতি সমবেদনা দেখিয়েছে। যা আমাদের হতাশ করে। আমরা সবাই মিলে এতোদিন ধরে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কাজ করছি, আমাদের চলাফেরা, পোশাক-আশাকের স্বাধীনতা থাকবে, বাক স্বাধীনতা থাকবে, একজন আরেকজনকে সম্মান দেখাবো, রাষ্ট্র এবং সমাজ আমাকে এ ব্যাপারে সমর্থন, সহযোগিতা করবে। কিন্তু দেখা গেলো সমাজ মেয়েটির বিপক্ষে আর ছেলেটির পক্ষে মতামত দিয়েছে তা আমাদের হতাশ করেছে। আমরা মনে করি, আবার নারী অধিকারগুলো তুলে ধরা দরকার।
তাসফিক হোসেইন, নারী বৈচিত্র্যময়। একেক শ্রেনির, একেক জায়গায় একেক ধরনের নারী আছে। সেখানে নারীকে নিয়ে এক ধরনের চিন্তা করা নারী এমনি হবে, এভাবেই চলবে তাহলে নারীর স্বাধীন চলা, কথাবলার স্বাধীনতার জায়গাটা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নারীর প্রতি সহিংসতা এভাবেই তৈরি হচ্ছে। সমাজ, সরকারের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। একজন মানুষ হিসেবে নারীর জন্য আমরা দাঁড়াতে চাচ্ছি না। নারী নিজে এসে প্রতিবাদ করবে, তার প্রয়োজনের কথা বলবে তা আমরা বন্ধ করে দিচ্ছি।
ডা. সিলভানা ইশরাত বলেন, এবারের বইমেলায় নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষার স্যানেটারি ন্যাপকিন নিয়ে যে ঘটনা ঘটেছে তা সত্যি দুঃখজনক। নারী সংস্কার কমিটির কাছে আমাদের দাবি, এ ধরনের ঘটনাগুলো যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া। আরেকটি বিষয় নারীর সহিংসতা প্রতিরোধে, অধিকার রক্ষায় নারীরাই কেনো শুধু কথা বলবে। এখানে পুরুষদেরও আওয়াজ তুলতে হবে।
//এল//