
সংগৃহীত ছবি
এলাকাভেদে জলবায়ু পরিবর্তনে নারীর উপর তৈরি হওয়া বিভিন্ন অভিঘাতের বিষয়সমূহ উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাল্যবিয়ে বাড়ছে পাশাপাশি নারীর স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে, ডির্ভোস, বাড়ছে, নারী নির্যাতন বাড়ছে, যৌতুক বাড়ছে। বন্যা কবলিত এলাকার নারী, আশ্রয়কেন্দ্রে আলাদা কক্ষ না থাকায় কিশোরীরা যৌন সহিংসতার শিকার হয়। বিশুদ্ধ পানির অভাবে দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ত পানির এলাকার মেয়েরা স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে, দূরবর্তী এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করতে গিয়ে নারীরা ধর্ষনের শিকার হচ্ছে- এসকল অভিঘাত মোকাবেলায় করণীয় সম্পর্কে তারা বিভিন্ন দিক নিদের্শনা তুলে ধরেন।
আজ শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে দশটায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আনোয়ারা বেগম মুনিরা খান মিলনায়তনে জলবায়ু বিপর্যয়ে নারীর উপর অভিঘাত মোকাবেলায় করণীয় বিষয়ক মতবিনিময় সভায় বক্তারা একথা বলেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন ও সঞ্চালনা করেন পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক পারভীন ইসলাম। মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন ৩১ টি জেলা শাখা থেকে আগত সংগঠকবৃন্দ। মুক্ত আলোচনা শেষে প্রাপ্ত সুপারিশসমূহ উপস্থাপন করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম।
স্বাগত বক্তব্যে মালেকা বানু বলেন, জলবায়ু বিপর্যয়ের ফলে প্রকৃতি ও মানুষ ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে -এই কথা দশকের পর দশক ধরে আলোচনা হয়েছে। বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে মানুষ ও প্রকৃতি এই বিপন্নতার মধ্যে আছে। পরিবেশ বিপর্যয় মানুষের জন্য হচ্ছে, কাজের মানুষকেই এই বিপর্যয় রোধে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত নারী, শিশু এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী নির্বিশেষে নারীর জন্য এলাকাভেদে অনেক বেশি অসমতা বৃদ্ধি করছে। এই পরিস্থিতিতে ) জলবায়ু বিপর্যয়ে নারীর উপর অভিঘাত মোকাবেলায় কেন্দ্র ও জেলা কমিটির উদ্যোগে সম্মিলিতভাবে করণীয় নির্ধাণের জন্য আজকের সভার আয়োজন করা হয়েছে।
পারভীন ইসলাম ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন ধরণের দূর্যোগ যেমন ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস, বন্যা, ভূমিকম্প, ভ’মিধস প্রবণ এলাকাগুলোর পরিস্থিতি ও নারীর উপর তৈরি হওয়া অভিঘাতসমূহ সম্পর্কে পর্যালোচনা করেন।
তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পর্যবেক্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী, প্রাকৃতিক দূর্যোগের প্রকোপ, জনসংখ্যার ক্ষতি এবং ক্ষতি মোকাবিলায় পদক্ষেপ এই চারটি বিষয়ের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি আরো বলেন, পরিস্থিতি মোকাবেলায় এলাকাগত পরিবেশ ঝুঁকির উপর গবেষণা পরিচালনা করতে হবে, নীতিমালা প্রণয়ন, পরিবেশ বিষয়ক প্রকল্পগুলোতে নারীদের সম্পৃক্ত করতে হবে, প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনায় নারীর অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দিতে হবে, কৃষক নারী, হাস-মুরগী ও গবাদি পশু পালনকারী নারীদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে এবং কর্মপরিবেশের ঝুঁকি হ্রাস ইত্যাদি সুপারিশসমূহ উপস্থাপন করেন।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন নোয়াখালী আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক রোকসানা আক্তার নবী, রংপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক রুমানা জামান, দিনাজপুরের আন্দোলন সম্পাদক অনামিকা পান্ডে, গাইবান্ধা জেলা শাখার পরিবেশ সম্পাদক বীথি বেগম, নারায়ণগঞ্জ জেলার পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক রওনক রেহানা,ব্রাম্মণবাড়িয়া জেলার সাধারন সম্পাদক সাথী চৌধুরী, বরিশালের জোৎ¯œা বেগম, ভোলা জেলার পরিবেশ সম্পাদক ইসরাত জাহান বনি, খুলনা জেলা শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. পপি ব্যানার্জী, বেলাবো জেলার নাজরীন হক, চট্টগ্রাম জেলার সহ-সভানেত্রী শেলী দে, বাগেরহাট জেলার সাধারণ সম্পাদক রিজিয়া পারভীন, সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রওশন আরা মুকুল, ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক রেহানা ইউনূস ও আন্দোলন সম্পাদক জুয়েলা জেবুন নেসা, নাটোর জেলার তসলিমা খান, রাঙামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শামীম আরা বেগম, মধুখালী জেলা শাখার , টঙ্গী জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেরুন্নেসা সীমা, কিশোরগঞ্জ জেলার, রাজবাড়ী জেলার ভারপ্রাপ্ত পরিবেশ সম্পাদক শম্পা প্রামাণিক, কুমারখালী জেলার আন্দোলন সম্পাদক মেরিনা আক্তার, রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মোবাররা সিদ্দিকা, মাদারীপুর জেলা শাখার সায়রা পারভীন, মুক্তাগাছা জেলা শাখার আন্দোলন সম্পাদক আয়েশা আক্তার, রাজশাহী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অঞ্জনা সরকার, পটুয়াখালী জেলা শাখার পরিবেশ সম্পাদক শিরীন নাহার, সাভার জেলা শাখার জেসমিন আক্তার লিপি, টাঙ্গাইল জেলা শাখার পরিবেশ সম্পাদক ফাতেমা বেগম, কিশোরগঞ্জ জেলার পরিবেশ সম্পাদক বনশ্রী সরকার, মধুখালী জেলার সভাপতি সুরাইয়া খানম, ফরিদপুর জেলাশাখার আন্দোলন সম্পাদক আনোয়ারা বেগম এবং কেন্দ্রীয় পরিবেশ উপপরিষদ সদস্য নবনীতা ইসলাম নীতু প্রমুুখ।
বক্তারা বলেন, খাল খননের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা কার্যকর করতে হবে, পয়ো:নিষ্কাশনের ব্যবস্থা বসতি পূর্ণ এলাকা থেকে দূরে করতে হবে। পর্যাপ্ত পানি ধরে রাখার জন্য খাল খনন করতে হবে, পর্যাপ্ত বৃক্ষরোপন কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে, বৃক্ষরোপনের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রাখতে হবে। ই্উনিয়ন পরিষদে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি সক্রিয় করতে হবে ও নারীবান্ধব হতে হবে, নারীর জন্য বাজেট বরাদ্দ রাখতে হবে। সরকারের পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ রোধে, পলিথিনের বিকল্প হিসেবে কাগজ ও পাটের তৈরি দ্রব্য ব্যবহারে নাগরিকদের সচেতন হতে হবে, নদীগুলোকে দখলবাণিজ্য থেকে মুক্ত করতে হবে, নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন বন্ধ করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে নারীদের খাপ খাইয়ে চলার জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দিতে হবে। দূর্যোগ-ব্যবস্থাপনা বিষয়ে নারীদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে, বসতিপূর্ণ এলাকায় পোল্ট্রি ফার্মের বর্জ্য নিষ্কাশনে সচেতন হতে হবে। ভূমিধস রোধে পাহাড় কাটা, টিলা কাটা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্লাষ্টিকের বর্জ্য রিসাইকিলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে, পযর্টন এলাকার বর্জ্য রিসাইকিলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
অ্যাড. মাসুদা রেহানা মুুক্ত আলোচনার সারসংক্ষেপ উপস্থাপনকালে জলবায়ুর কারণে সৃষ্ট অভিঘাতে নারীর স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নিরসনে পদক্ষেপ গ্রহণ, বর্জ্যব্যবস্থাপনার জন্য সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ, প্রশিক্ষণ মডিউল তৈরি ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে, সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করা এবং এলাকাভিত্তিক জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবেলায় গবেষণা করার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, জলবায়ু বিপর্যয় মোকাবেলায় পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন ক্রমশ জোরদার হচ্ছে। জলবায়ুর অভিঘাতে নারীর স্বাস্থ্য, শিক্ষার উপর নেতিবাচক প্রভাব তৈরি হচ্ছে, দারিদ্র্যতা বাড়ছে, নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ছে। এমতাবস্থায় সচেতনতামূলক কার্যক্রম, অ্যাডভোকেসি কার্যক্রম ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সার্বিক পরিস্থিতিকে বিবেচনায় রেখে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলা করে নারীর মানবাধিকার রক্ষায় সাংগঠনিক কর্ম্পরিকল্পনা গ্রহণের উপর গুরুত্ব দিতে তিনি উপস্থিত সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
উক্ত মত বিনিময় সভায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির নেত্রীবৃন্দ, সম্পাদকমন্ডলী, ৩১ টি জেলা শাখার সংগঠকবৃন্দ এবং সংগঠনের কর্মকর্তা সহ প্রায় শতাধিক জন উপস্থিত ছিলেন।
//এল//