সংগৃহীত ছবি
দীর্ঘ ৮ বছরের সাধনায় লালন দর্শনের দীক্ষায় উপযুক্ত হওয়ায় ফকির গুরু নহির শাহর নির্দেশে খেলাফত গ্রহণ করেছেন দেবোরাহ জান্নাত ও তার স্বামী রাজন ফকির।
তাদের পরিভাষায়, ইহজাগতিক লোভ, লালসা, মায়া-মমতা ও মোহ ত্যাগ করে জীবিত থেকেই গ্রহণ করলেন মরণের স্বাদ। লালন দর্শনের দীক্ষায় অসংখ্য সাধু-ফকির খেলকা বা খেলাফত গ্রহণ করলেও দেশের ইতিহাসে দেবোরাহ জান্নাতই প্রথম, যিনি বিদেশি নাগরিক হিসেবে খেলকা বা খেলাফতপ্রাপ্ত হলেন।
তাদের খেলাফত গ্রহণ উপলক্ষে কুষ্টিয়া দৌলতপুর উপজেলার প্রাগপুর দীঘিরপাড় এলাকায় হেম আশ্রমে সাধুসঙ্গ অনুষ্ঠানে আগমন ঘটেছিল হাজারো সাধুগুরু বাউল এবং লালন অনুসারীদের। দেশের নানা প্রান্ত থেকে লালন ভক্ত, বাউল, সাধুগণ হেম আশ্রমে জড়ো হন।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় নিজেদের দীনহীন করে শুধুমাত্র সাদা কাফনের কয়েক টুকরো কাপড় পরিধান করে দেবোরাহ ও তার স্বামী রাজন হেম আশ্রমে অনুষ্ঠানিকভাবে খেলাফত গ্রহণ করেন। এ সময় উপস্থিত পরিবারের সদস্য, বাউল সাধু ও দর্শকদের কান্নায় সেখানকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে। চোখ বেঁধে সাতপাক ঘুরিয়ে দীনহীন করে তাদের গুরু দীক্ষায় দীক্ষিত করা হয়। পরানো হয় শুভ্র ভূষণ।
দেবোরাহ জান্নাত তার অভিব্যক্তিতে বলেন, “দীর্ঘদিনের লালন দর্শনের জ্ঞান সাধনায় চলার পথে কারো কাছে অপরাধ করে থাকলে, কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকলে সকলে দয়া করে নিজ গুণে ক্ষমা করে দেওয়ার অনুরোধ করছি। এ দেশে (বাংলাদেশে) আছি মনে করবেন আমি আপনাদের। আমার আর কোনো ঠিকানা নাই, কোনো ভবিষ্যত নাই।”
অনুষ্ঠানে আগত সাধু হৃদয় ফকির বলেন, “সাধুগুরু ফকির নহির শাহ্ এর সান্নিধ্যে দীর্ঘদিনের লালন দর্শন সাধনায় দেবোরাহ জান্নাত ও তার স্বামী রাজন খেলাফত-খিলকা অর্জন করলেন। ইহজাগতিক লোভ, লালসা, মায়া-মমতা ও মোহ ত্যাগ করে দু’জনের খেলাফত প্রাপ্তির মাধ্যমে লালন দর্শনের আরও বিস্তৃতি ঘটবে।”
খিলাফত গ্রহণের বিষয়ে গুরু ফকির নহির শাহ্ বলেন, “লালন সাধনায় একজন ভক্তকে চারটি স্তর পার করতে হয়। সিদ্ধ হওয়া তথা পরিপূর্ণ আদর্শের অধিকারী হলেই কেবল একজন ভক্তকে খেলাফত প্রদান করা হয়। যারা খেলকা গ্রহণ করেন তাদের সকল প্রকার অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত না হওয়ার জন্য শপথ পাঠ করানো হয়।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশিষ্ট লালন গবেষক সাইমন জাকারিয়া বলেন, “লালন দর্শনের করণ-কারণ সাধনার যে দীক্ষাগুলো আছে তা তিনি সুন্দরভাবে অর্জন করতে পেরেছেন বলেই সাধুগুরু তাকে খেলাফত দিয়েছেন। দেশের ইতিহাসে বিদেশি হিসেবে তিনিই প্রথম, যিনি লালনপন্থায় দীক্ষা নিয়ে খেলাফত অর্জন করেছেন।”
//এল//