সংগৃহীত ছবি
প্রতিবন্ধী নারী-শিশুরা সহিংসতার শিকার বেশি হয়। একজন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়ে গর্ভবতী হয়। মেয়েটি যাতে বারবার গর্ভবতী না হয় এ কারণে অভিভাবক ডাক্তারের কাছে নিয়ে তার জরায়ু ফেলে দেয়। এরকম ঘটনা অনেক রয়েছে। পরবর্তীতে বিয়ে হলেও ওই প্রতিবন্ধী নারী সন্তান জন্ম দিতে পারেন না। স্বামীর সংসার থেকে আবার বাবার বাড়িতে ফিরে আসেন। বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রেও ভুক্তভোগী প্রতিবন্ধী নারীরা বৈষম্যের শিকার হয়। সহিংসতা, ধর্ষণের শিকার প্রতিবন্ধী নারী-শিশুর ২০১৫, ২০১৭ সালের মামলাগুলো এখনো বিচারাধীন রয়েছে। কারণ বিচারকরা জানেন না তাদের বিচার প্রক্রিয়া কেমন হবে! অনেক ভিকটিম কথা বলতে পারেন না। এ কারণে বিচার প্রক্রিয়ায় বিঘ্নতা সৃষ্টি হয়।
অন্যদিকে নারী-শিশু মন্ত্রণালয়, আইন ও বিচার সম্পর্কিত মন্ত্রণালয়গুলোরও প্রতিবন্ধী নারী-শিশু সম্পর্কে ধারণা নেই জানালেন ডাব্লিউডিডিএফ এর নির্বাহী পরিচালক আশরাফুন নাহার মিষ্টি।
রবিবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে উইমেন উইথ ডিজঅ্যাবিলিটিজ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্র এর যৌথ আয়োজনে ‘নারী সাংবাদিকতা ও মিডিয়া কর্মীদের সাথে প্রতিবন্ধিতা ও সহিংসত ‘ বিষয়ক মতবিনিময় সভা’য় একথা বলেন।
অনুষ্ঠানটিতে আর্থিক সহায়তা করেছে আইডব্লিউআরএডব্লিউ-এশিয়া প্যাসিফিক।
সভাপতিত্ব করেছেন বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু।
শুভেচ্ছা বক্তব্য দিয়েছেন ডাব্লিউডিডিএফ এর প্রজেক্ট এসিস্ট্যান্ট কোঅর্ডিনেটর শারমিন আক্তার দোলন, প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন প্রজেক্ট কোর্ডিনেটর প্রিয়তা ত্রিপুরা এবং আলোচক ছিলেন দৈনিক ইত্তেফাকের স্টাফ রিপোর্টার রাবেয়া বেবী।এই মতবিনিময় সভায় ১৮ নারী সাংবাদিক অংশ নেয়।
আশরাফুন নাহার মিষ্টি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও প্রতিবন্ধী নারী-শিশুর কোনো পরির্তন হয়েছে কিনা দেখতে পাচ্ছি না।তবে আমরা প্রতিবন্ধী নারীদের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। এবছর সাতক্ষীরার শ্যামনগরের ১০ প্রতিবন্ধী নারীকে সাবলম্বী করতে আর্থিক সহায়তা দিয়েছি। এভাবেই আমরা বগুড়া, কুমিল্লা, খুলনাসহ বিভিন্ন এলাকার প্রতিবন্ধী নারীর বিভিন্ন ধরনের বৈষম্য নিরসনে কাজ করছি। এর মধ্যে রয়েছে শিক্ষা-কর্মসংস্থানের অধিকার, সহিংসতা প্রতিরোধ, ন্যায় বিচার, আর্থিক সহায়তাসহ নানা ধরনের সমস্যা নিরসনে ভূমিকা রাখছি। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সম্মানসূচক অবস্থান নিশ্চিতে কাজ করছি।
প্রিয়তা ত্রিপুরা বলেন, দেশের আইন অনুযায়ী ১২ ধরনের প্রতিবন্ধিতা রয়েছে। সমাজে ট্যাবু রয়েছে, পাপের কারণে প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম হয়েছে। সহিংসতার কারণেও অনেক নারী-শিশু প্রতিবন্ধিতার শিকার রয়েছে। অনেক নারী পারিবারিক সহিংসতার কারণে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছে। অঙ্গহানির শিকার হয়ে প্রতিবন্ধিতার শিকার হয়েছেন।
এসডিজি’র ৮ লক্ষ্যমাত্রায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, দারিদ্রতা দূর করতে পারলে প্রতিবন্ধী নারীর প্রতি সহিংসতার পরিমাণ কমে যাবে। ১৬ লক্ষমাত্রায় সঠিক আইনের প্রয়োগ করতে পারলেও সহিংসতা কমে যাবে। ১৭ লক্ষ্যমাত্রায় বলা হয়েছে, একে অপরের প্রতি সৌহাদ্য বাড়াতে হবে।
তিনি আরো বলেন, চলতি বছরে সমাজসেবা অধিদপ্তর চারটি জেলা খুলনা, বগুড়া, কুষ্টিয়া এবং রংপুরের ১০ উপজেলায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সমন্বয় কমিটির সভা করেছে। যেখানে ১২০টি সমন্বয় কমিট ‘র সভা করার কথা ছিল। অনেক জেলায় এই কমিটি নেই।
তিনি বলেন, পাঠ্যসূচিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সাথে কথা বলার জন্য সাইন ল্যাংগুয়েজ, ব্রেইল পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত করলে শিক্ষার্থীরা ছোটবেলা থেকেই ইশারা ভাষা শিখতে পারতো।
নাসিমুন আরা হক মিনু বলেন, প্রতিবন্ধী নারী-শিশু আমাদের দেশের নাগরিক, সমাজেরই মানুষ। জন্মগত প্রতিবন্ধী শিশুদের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন, নানারকম দুর্ঘটনাসহ দুর্যোগকালীন সময়েও অনেক মানুষ প্রতিবন্ধিতার শিকার হয়। অনেক প্রতিকূলতা কাটিয়ে তারা এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদেরকেও তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাদের সমস্যাগুলো যেমন তুলে ধরতে হবে, সফলতার কথাও তুলে ধরতে হবে।
রাবেয়া বেবীর মতে, সরকারের দায়িত্ব রয়েছে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সহায়তা করার।
শাহীন আক্তার দোলন বলেন, প্রতিবন্ধী নারীদের উন্নয়নে রাষ্ট্র, সমাজ, গণমাধ্যম কর্মীরা কি ভূমিকা রাখছেন তাও তুলে ধরা দরকার।
//এল//