সংগৃহীত ছবি
ছায়ানটের বিজয় উৎসব ২০২৪ এর গোটা আয়োজন জুড়ে ফিরে ফিরে উচ্চারিত হলো বিজয়ের পথে বাঙালির নির্ভীক অভিযাত্রার কাহন। প্রাণহারী শত প্রতিকূলতার মধ্যেও বাঙালির আপন সংস্কৃতিতে থিতু হবার, মাথা উঁচু করে বাঁচবার কথামালা।
সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪টায় ছায়ানটের আয়োজনে ছায়ানট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হলো ছায়ানটের বিজয় উৎসব।
ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবনের সামনে, বিকাল ৪টা ৩১ মিনিটে জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন নির্বাহী সভাপতি ডা. সারওয়ার আলীসহ সংগঠকরা।
এ সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, ১৯৭১ সালের যে সময় বীর বাঙালির কাছে মাথা নোয়ায় পাকিস্তানি বাহিনী।
তিন পর্বের আয়োজনে ছায়ানটের সঙ্গী হয়ে বাচিকশিল্প চর্চার প্রতিষ্ঠান কণ্ঠশীলন পরিবেশন করে কাব্যালেখ্য “আমাদের রক্ত মিছিল” এবং সংস্কৃতি-সমন্বিত সাধারণ শিক্ষার প্রতিষ্ঠান নালন্দা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিশুরা পরিবেশন করেছে গীতরঙ্গ “স্বাধীনতার অভিযাত্রা”। ছায়ানটের পরিবেশন ছিল গীতনৃত্যালেখ্য “অপারাজেয় বাঙালি”।
ছায়ানটের পরিবেশনায় পরিবেশিত হয় গীতিনৃত্যালেখ্য: অপরাজেয় বাঙালি।
বঙ্গভঙ্গ রদের আন্দোলন থেকে শুরু করে বাঙালি জাতির সার্বভৌমত্ব ও রাস্ট্র বিজয়ের বর্ণনা। আবুল ওমারাহ মোঃ ফকরদ্দীন, সুকান্ত ভট্টাচার্য, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অতুল প্রসাদ সেন, সেখ সামছুদ্দীন, কাজী নজরুল ইসলাম, আবুবকর সিদ্দিক, শহীদুল ইসলাম, আবদুল লতিফের গান এবং সন্তোষ ঢালীর লিখনের এই গীতিনৃত্যালেখ্য পরিবেশন করেন ছায়ানটের দেড় শতাধিক শিল্পী।
কণ্ঠশীলন পরিবেশনায় কাব্যালেখ্য পরিবেশিত হয় আমাদের রক্ত মিছিল।
বাঙালির শতবছরের সংগ্রামে অর্জন করা স্বাধীন জন্মভূমি নিয়ে এই কাব্যালেখ্য। জীবনানন্দ দাশ, সৈয়দ শামসুল হক, ফজল শাহাবুদ্দিন, জহির রায়হান, আল মাহমুদ, আসাদ চৌধুরী মাহবুবুল আলম চৌধুরী, ফজল শাহাবুদ্দিন, মহাদেব সাহা,হারুন অর রশীদ, সৈয়দ শামসুল হক কাব্যগ্রন্থ, রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, জসীমউদ্দিন, নবারুণ ভট্টাচার্য, আহসান হাবীব, আনিসুল হক প্রমুখ কবির কাব্যাংশ থেকে পাঠ করা হয়। ছিল জর্জ হ্যারিসনের গান এবং সংগৃহীত অংশ থেকে পুঁথি পাঠ। অংশ নিয়েছেন কণ্ঠশীলনের ৯জন আবৃত্তিশিল্পী।
নালন্দা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিশুদের পরিবেশনায় গীতরঙ্গ: স্বাধীনতার অভিযাত্রা পরিবেশিত হয়।
পলাশীর প্রান্তরে শৃঙ্খলিত হলো স্বাধীনতা। বৃটিশ সূর্য গ্রাস করলো এই ভূখণ্ডকে। এর পরের সময়কাল বঞ্চনার, নিপীড়নের, দারিদ্রের, দুঃখের। কিন্তু মানুষ জেগেছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে বারে বারে; একটা মানবিক, বৈষম্যহীন সমাজ নির্মাণে লড়াই করেছে, প্রাণ দিয়েছে, বার্তা রেখে গেছে পরের প্রজন্মের জন্য।
নালন্দার শিক্ষার্থীদের ইতিহাস চর্চার অংশ হিসেবে এই গীতরঙ্গটি তৈরি হয়েছে। তারা ইতিহাসের দীর্ঘ পথপরিক্রমার অংশ হয়ে আলাদা করে চিনে নেয় সময়ের নানা পর্ব, নানা বাঁক। চিনে নেয় ক’জন তরুণ বিপ্লবীকে, যাঁরা দেশ-মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে দীর্ঘ সংগ্রামের পথ বেছে নিয়েছিলেন, অকুণ্ঠ ভালোবাসায় দেশের মানুষের কল্যাণ চেয়েছিলেন।
১৭৫৭ থেকে ১৯৭১ এই সময়কালের কয়েকটি পর্বে পরিভ্রমণই গীতরঙ্গ ‘স্বাধীনতার অভিযাত্রা’।
গান, যন্ত্রানুষঙ্গ, নাচ, কথা, অভিনয় এমনকি দৃশ্যের প্রয়োজনে নানা রকম শব্দের আবহ তৈরি- সবকিছুতেই স্বাবলম্বী শিশুরা। অংশ নিয়েছে নালন্দা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০২ জন শিক্ষার্থী।
//এল//