সংগৃহীত ছবি
বাংলাদেশের গৃহকর্মীদের অধিকার রক্ষা, শ্রমিক হিসেবে তাদের শ্রম আইনে অন্তভুক্তির দাবি জানিয়েছে বিশিষ্টজনেরা।
আজ রোববার (৮ ডিসেম্বর) বেলা দুটোয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কর্মজীবী নারী ও গৃহকর্মী জাতীয় ফোরাম বাংলাদেশের আয়োজনে গৃহকর্মী সম্মিলন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনেরা এ কথা বলেন। হাজারের বেশি গৃহকর্মী এই সম্মেলনে অংশ নেয়।
নারীর প্রতি নির্যাতন, হয়রানি ও সহিংসতার ঘটনা প্রতিরোধে ১৬ দিনব্যাপি অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সহযোগিতা করেছে অক্সফাম ইন বাংলাদেশ ও কানাডা সরকার।
অনুষ্ঠানে সারাদেশের প্রায় এক হাজার গৃহকর্মী, কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শক অধিদপ্তরের লেবার ইন্সপেক্টর ইফ্ফাত আরা, শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মেদ, অক্সফাম ইন বাংলাদেশ-এর প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাহমুদা সুলতানা, গৃহকর্মী জাতীয় ফোরাম, বাংলাদেশ - এর সভাপতি, জাকিয়া সুলতানা, গৃহকর্মী অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের সমন্বয়ক আবুল হোসাইন, গৃহকর্মী জাতীয় ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মর্জিনা সুলতানা, কর্মজীবী নারীর অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক সানজিদা সুলতানা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ”গৃহকর্মীরা প্রমাণ করেছে যে এখন তারা , ঘর থেকে বের হয়ে সংগঠিত হতে পারে ও শক্তি অর্জন করতে পারে। গৃহকর্মীর হাত শুধু সেবা করে না, মুষ্টিবদ্ধ হয়ে দাবিও জানাতে পারে। এমনভাবে দাবি জানাতে হবে সরকার যাতে আইনের স্বীকৃতির দেওয়ার জন্য নিজ উদ্দ্যোগে গৃহকর্মীদের আলোচনায় বসতে বাধ্য হন ।”
বাংলাদেশে গৃহকর্ম পেশাটি এখনও আমাদের দেশে সম্মানজনক কোন পেশা হিসেবে স্বীকৃত নয় এবং গৃহকর্মীরা শ্রমিক হিসেবে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬-এ ও অন্তর্ভূক্ত নয়। ফলে গৃহকর্মীরা শ্রমিকের অধিকার, সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং গৃহকর্মীরা কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানিসহ নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে।
মাহমুদা সুলতানা বলেন, গৃহকর্মীদের অধিকার রক্ষায় সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। তাদের সামাজিক, অর্থনৈতক অধিকার নিশ্চিত করা দরকার।
জাকিয়া সুলতানা বলেন, বাংলাদেশের নির্যাতিত নারীর মধ্যে বেশি ভাগই গৃহকর্মী। প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টির সুষ্ঠু পদ্ধতি প্রবর্তন ও ১(৯) ধারা বাতিল করে শ্রম আইনে গৃহকর্মীদের অন্তর্ভুক্তির দাবি জানান।
ইফ্ফাত আরা বলেন, ”যদিও আমরা শ্রম আইন বাস্তবায়ন করি, গৃহকর্মীরা শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত নয় বিধায় গৃহকর্মীদের নিয়ে কাজ করা যাচ্ছে না। আশা করা যাচ্ছে, খুব শীঘ্রই শ্রম আইনের সংস্কার হবে, গৃহকর্মীরা শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত হবে । নির্যাতন প্রতিরোধের শিক্ষা পরিবার থেকেই শুরু করতে হবে শিশুদের শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে।”
আয়োজনের অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে গৃহকর্মীদের কর্মসংস্থানের মেলা আয়োজন করা হয় । যেখানে অনাবাসিক গৃহকর্মীর নিয়োগ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে গৃহকর্মীদের নিয়োগ দেওয়া হয়। ব্যস্ত শহরের গৃহকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান না থাকায় নিয়োগকারীদের বিভিন্ন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সেই লক্ষ্যে সুনীতি প্রকল্পের জব প্লেসমেন্ট অফিসাররা গৃহকর্মী ও নিয়োগকারীদের মধ্যে বিভিন্ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে গৃহকর্মীদের নিরাপদ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেন।
গৃহকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃত হওয়া, এখন সময়ের দাবি । এর মাধ্যমে গৃহকর্মীদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত, গৃহকর্মীর কাজের মর্যাদা,সম্মান ও পারিশ্রমিক নিশ্চিত হবে। নিশ্চিত হবে তাদের নিরাপদ কর্মক্ষেত্র । উক্ত সম্মিলনে গৃহকর্মীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গৃহকর্মী জাতীয় ফোরামের সভাপতি ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক ফারহানা আফরিন তিথি ও গৃহকর্মী জাতীয় ফোরামের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা প্রতিবাদী আবৃত্তি করেন এ নিযাতন থামবে কবে, থামবে কবে, থামবে কবে উপস্থাপন করেন।
//এল//