সংগৃহীত ছবি
‘পারিবারিক আইনে সমতা আনি,নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ করি’- এই স্লোগানের আলোকে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালন উপলক্ষ্যে গৃহীত কর্মসূচির আওতায় নারীর ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিষয়ে পনেরো টি জেলা শাখার তরুণীদের সাথে মতবিনিময় সভা অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়।
আজ ৫ ডিসেম্বর বিকাল ৩:৩০টায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু।
নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিষয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করেন, সংগঠনের কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার সম্পাদক রীনা আহমেদ।
সমাপনী বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম।
তরুণী সদস্যদের মধ্যে বাগের হাট জেলার তরুণী সদস্য নওরীন,রেক্সোনা রীমা কুড়িগ্রাম জেলার চাদনী, সুনামগঞ্জ জেলার তিথি দে ও সুমা সরকার, সাভার জেলার মণিদিপা চক্রবর্তী, সিলেট জেলা শাখার স্মৃতি বৈষ্ঞব, সুষ্মিতা দাস, সর্বাণী দাস কাউখালী জেলা শাখার বিদ্যা ভারতী ব্রম্মচারী, কুমারখালী জেলার জারীন তাসনিম, পাবনা জেলা শাখার কামরুন জলি, মুন্সিগঞ্জ জেলা শাখা থেকে জান্নাতুল ফেরদৌস, ফরিদপুর জেলা শাখার ফারিহা শাহনেওয়াজ, মধুখালী জেলাশাখার রিফাত জাহান, ব্রাম্মণবাড়িয়া থেকে প্রদীপ ঋষি ও ইতি, ঢাকা মহানগরের প্রজ্ঞা লাবণী, নারায়ণগঞ্জ জেলার তিথি সুবর্ণা, বরিশাল জেলাশাখার সুমাইয়া আক্তার, জ্যোর্তিময় মিস্ত্রী, তাসনিম জাহা শেহতাজ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
তারা বলেন তৃণমূলে অনেক নারী সহিংসতার শিকার হচ্ছে,সমাজে নারীর প্রতি নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে,বাল্যবিয়ে বেড়েছে, নারীর প্রতি সহিংসতা মোকাবেলায় প্রতিরোধের উপর গুরুত্ব দিতে হবে, সহিংসতা তৈরির মূল ক্ষেত্র পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে, নির্যাতনের শিকার নারীর পরিচয় গোপন রেখে আইনী সহায়তা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে, সোশাল মিডিয়াতে নারীর প্রতি অবমাননাকর বক্তব্য প্রচার বন্ধ করতে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে,অভিভাবক ছাড়া কোর্টে গিয়ে নোটারি সিস্টেমের মাধ্যমে বিয়ে বন্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।
পাশাপাশি তারা আরো বলেন সাইবার অপরাধ, অনলাইনের ব্যবহার বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে সকুল কলেজে সচেতনতা মূলক অ্যাডভোকেসি করতে হবে, সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কমিটি তৈরি করতে হবে, অর্থনৈতিক কাজে দক্ষতা তৈরি জন্য নারীদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে, আইনের প্রয়োগের উপর জোর দিতে হবে, সাংস্কৃতিক চর্চার উপর গুরুত্বদিতে হবে, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার আওতায় নিয়ে আসতে হবে, মেয়েদের বাল্যবিয়েসহ যেকোনো বৈষম্যমূলক আচরণের প্রতিবাদে না বলা শিখতে হবে, নারীর জন্য সম্পদ সম্পত্তিতে সমান অধিকার দিতে হবে, আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিতের সাথে সাথে সমাজের সকলের নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে, অর্থনৈতিকভাবে নারীকে সাবলম্বী হতে হবে, সহিংসতার শিকার নারীদের আশ্রয়ের জন্য সরকারিভাবে শেল্টার হোম গড়ে তুলতে হবে, জেন্ডার সাম্য বিষয়ক-ইস্যূগুলিতে রীল তৈরি করে প্রচারের উদ্যোগ নিতে হবে
সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য অর্জন করতে নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা বন্ধ করা জরুরি।– নারী ও কন্যার প্রতি নির্যাতন কেবল নারীর ইস্যূ নয় এটি একটি সামাজিক ইস্যূ। পুরো সমাজব্যবস্থা নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতনের কারণে সৃষ্ট নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হয়, তাই নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সমাজের সকলকে এগিয়েআসতে হবে। সেই সাথে তরুণ সমাজকে এরই ধরণের সহিংসতা বন্ধে সক্রিয় ও অগ্রণী ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।
স্বাগত বক্তব্যে সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, এবারের আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালন উপলক্ষ্যে গৃহীত ১৬ দিনের কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ বৈশ্বিক নারী আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করছে।
নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে জাতিসংঘ সকলকে সচেতন করে তোলার পাশাপাশি সকল সদস্য রাষ্ট্রের প্রতি নিজ নিজ দায়বদ্ধতার উপর গুরুত্ব দেয়ার জন্য ঘোষণা দিয়েছে কেননা নারীর প্রতি সহিংসতা নির্মূল করা না হলে প্রকৃত উন্নয়ন অর্জন সম্ভব হচ্ছেনা। নারীর প্রতি সহিংসতাকে তরুণরা কিভাবে দেখছে, তরুণ-তরুণীদের উপর সহিংসতার নেতিবাচক প্রভাব কেমন এবং সহিংসতা প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে আলোচনার জন্য আজকের মত-বিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার সম্পাদক রীনা আহমেদ বলেন নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার অনেক ঘটনা প্রকাশ পায়না সামাজিক নিরাপত্তার কারণে । তিনি ২০২০- থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ১৩ টি পত্রিকায় প্রকাশিত নারীর প্রতি সংঘটিত সহিংসতার তথ্য উপস্থাপন করে বলেন পরিবারে, কর্মক্ষেত্রে, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিবহনে নারী ও কন্যারা সহিংসতার শিকার হচ্ছে পারিবারিক সদস্য, পরিচিত ও অপরিচিত জনের দ্বারা। তিনি পারিবারিক সহিংসতা (যৌতুক, বাল্যবিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ), যৌন নির্যাতন, সাইবার সহিংসতার ধরণ ও কারণ সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং সহিংসতা প্রতিরোধের জন্য বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগসমূহ : সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির মাধ্যমে আন্দোলন গড়ে তোলা, সরকার, নীতিনির্ধরকদের সাথে অ্যাডভোকেসি-লবি,সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা, সহিংসতার শিকার নারী ও কন্যাদের চিকিৎসা, আইনী সহায়তা প্রদান এবং নারীও পুরুষদের সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ দেয়া ইত্যাদি উল্লেখ করেন।
তরুণীদের আলোচনা শেষে সমাপনী বক্তব্যে সীমা মোসলেম বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ সাংগঠনিক কার্যক্রমের মূল এজেন্ডাগুলোর মধ্যে প্রথম এজেন্ডা। নারীর অধিকারহীনতার জন্য সে অধ:স্তন দৃষ্টিভঙ্গির শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ মনে করে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের কার্যক্রমে তরুণ-তরুণীরা আরো সক্রিয়ভাবে যুক্ত হতে পারে ও ভ’মিকা পালন করতে পারে। তিনি এসময় নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ ও প্রতিকারের কাজে তরুণদের যুক্ত হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।
উক্ত অনলাইন মত বিনিময় সভায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির নেত্রীবৃন্দ, ১৫ টি জেলা শাখার তরুণী সদস্য, সংগঠক এবং কর্মকর্তারাসহ প্রায় শতাধিক জন উপস্থিত ছিলেন। সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের গবেষণা কর্মকর্তা আফরুজা আরমান।
//এল//