সফল উদ্যোক্তা জিনাত সুলতানা,সংগৃহীত ছবি
যাত্রাপথের প্রতিবন্ধকতার মধ্যে অন্যতম ছিলো যথেষ্ট মূলধন এবং ব্যবসায়িক জ্ঞানের অভাব। তবে তিনি সাহস করে ব্যবসায় নামার পর একে একে সব সমস্যা মোকাবিলা করে এগিয়ে গেছেন। ব্যাবসায়িক জ্ঞান অর্জনের জন্য ই-কমার্স বিষয়ে অনেকগুলো কোর্স করেন, সেখান থেকে তার বিভিন্ন উদ্যোক্তাদের সাথে পরিচয় হয় ধীরে ধীরে তার জানার এবং বোঝার পরিধি বাড়ে। এরপর তিনি বিভিন্ন ব্যবসায়িক গ্রুপের সাথে যুক্ত হন, নিজের পরিচিতি বাড়াতে থাকেন এবং বিভিন্ন মেলায় অংশ গ্রহণ করেন। এভাবে তার ব্যবসা আরও বড় হয়। এখন বেশ ভালো সংখ্যক কাস্টমারের আস্থার অনলাইন পেইজ Dhaaga।
এতক্ষণ বলছিলাম সফল উদ্যোক্তা জিনাত সুলতানার কথা। যার ইচ্ছা ছিল কণ্ঠশিল্পী হওয়ার কিন্তু হয়েছেন উদ্যোক্তা। বাস্তব জীবনের প্রতিকূল পরিস্থিতিই তার উদ্যোক্তা হওয়ার পথে এগিয়ে নিয়েছে।
জিনাত সুলতানা জানান, উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার সময় ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন প্রিয় মানুষকে। দিন কাটছিলো সুখেই তবে সেই সুখ স্থায়ী হলো না। মাত্র ২২ বছর বয়সে স্বামীকে হারান তিনি। তখন জিনাতের সামনে ছিল অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ আর কোলে ছিল ২ বছর বয়সী একটি কন্যাশিশু। জিনাতের পড়ালেখা শেষ হয়নি তখনও এবং আয় রোজগার হবার মতো কোন চাকরিও তিনি করতেন না। বাবার বাড়িতে ফিরে যান। আর সেখানে থেকেই ইডেন মহিলা কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
একটার পর একটা চাকরির জন্য আবেদন করেও দেখছিলেন না সফলতার মুখ। এলাকার বিভিন্ন স্কুল-কোচিংয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি প্রাইভেট পড়াতেন জিনাত। এভাবেই চাকরি খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে প্রানীসম্পদ অধিদপ্তরের ভেড়া উন্নয়ন প্রকল্পে চাকরি পান তিনি। কিন্ত তার এই আর্থিক স্বচ্ছলতা বেশিদিন থাকলো না। ওই প্রকল্প ১১ বছরের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। এই সময়ের মধ্যে তিনি তার বাবা মাকেও হারান। তখন কীভাবে তার সংসার আর কন্যার পড়ালেখার খরচ চালাবেন; এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান।
এমন সময় তাকে ব্যবসার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা যোগায় তার ভাগনী শারমিন সুলতানা অনন্যা। আর তাকে সার্বিক সহযোগিতা করেছে তার মেয়ে ফাইজা হাসিন শৈলী।
মাত্র ৫,০০০ টাকা নিয়ে ২০১৭ সালের নভেম্বরে জিনাত তার অনলাইন ব্যবসা শুরু করেন। আজ সেই ব্যবসার মোট সম্পদ ১০ লক্ষ টাকা সমমূল্যের। কিন্ত তার এই যাত্রাটা কখনোই সহজ ছিলো না। ব্যবসার শুরুতে এমন কথাও শুনতে হয়েছে যে, এম.এ. পাশ করে ফেরিওয়ালা হয়েছেন!
এসব শুনেও তিনি দমে যাননি। ব্যবসার শুরুটা ইন্ডিয়ান থ্রি পিস বিক্রয় করার মাধ্যমে হলেও আজ তার ফেইসবুক পেইজ Dhaaga তে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পণ্য। তার পেইজে রয়েছে দেশি-বিদেশি স্টিচ-আনস্টিচ থ্রি পিস, টু পিস, ওয়ান পিস, কুমিল্লার সিল্ক, কটন, বাটিক থ্রি পিস, শাড়ি, হাতে বানানো ও বিদেশ থেকে আমদানীকৃত গয়না, রংপুরের শতরঞ্জি, টেবিল রানার, ব্লক, বাটিক করা বিছানার চাদর, নিজস্ব ডিজাইনে—কারচুপি, হ্যান্ডপেইন্ট করা পোশাক, রেডিমেড পায়জামা এবং পেটিকোট। দেশ ছাড়িয়ে ইউকে, অস্ট্রেলিয়া এবং কানাডাতে ও পৌঁছে গেছে জিনাতের বাহারী পণ্য।
Dhaaga পেইজের সিগনেচার পণ্য হলো হাতে বানানো গয়না, কুশিকাটার বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী এবং নিজস্ব ডিজাইনে তৈরি পোশাক ও শাড়ি। জিনাত যেহেতু অল্প বয়সে স্বামী হারিয়েছেন, তাই তিনি সবসময়ই বিধবা, সুবিধাবঞ্চিত ও কর্মসংস্থানের খোঁজে থাকা নারীদের সাথে কাজ করাকে প্রাধান্য দেন। জিনাতের এই ব্যবসাটাকে সফলতার পথে নিয়ে যেতে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন এমন অনেক নারী।
জিনাতের মতে, স্বল্প পুঁজিও যদি সঠিকভাবে ব্যবসায় খাটানো যায় আর ধৈর্য্য এবং পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকে তাহলে ব্যবসা একদিন বড় হতে পারে। জিনাতের Dhaaga পেইজ নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা হলো, তিনি এই অনলাইন ব্যবসাকে একটি এনজিওতে রুপদান করবেন। যাতে এর মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত নারীরা তাদের প্রতিভা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারে।
//এল//