লায়লা খালিদ,ফাইল ছবি
প্রতিদিন যাদের শত্রুর সাথে পাল্লা দিয়ে বেঁচে থাকতে হয়, তাদের রক্তে বইতে থাকে প্রতিশোধের আগুন৷ ৪৩ বছর আগে ১৯৮০ সালেও ইসরাইল জেরুজালেমকে রাজধানী হিসেবে ঘোষনা করে। মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ শহর জেরুজালেম জুদাইয়ান পর্বতমালা ও ভূমধ্যসাগরের মধ্যবর্তী মালভূমিতে অবস্থিত। মূলত ইসলাম, ইহুদি, আর খ্রিস্টান এই তিন ধর্মের মিশ্রণে জেরুজালেম ধারণ করে সহস্র বছরের প্রাচীন ইতিহাস।
বিশ্ব দূর্দশার এক স্থির চিত্রের নাম ‘ফিলিস্তিন’।
ফিলিস্তিনের বুকে তৈরি হওয়া নতুন এই ইসরায়েল রাষ্ট্রের অধীনে দখল হতে থাকে একের পর এক ফিলিস্তিনের স্বাধীন শহরগুলো। ১৯৪৪ সালের ৯ এপ্রিল ফিলিস্তিনের হাইফা শহরে লায়লার জন্ম।
ফিলিস্তিনের প্রত্যেকটি বাস্তহারা সন্তানের মতো লায়লার ভেতর সেই ছোটকাল থেকেই একটা ঘৃনা জন্ম নিয়েছিল ইসরায়েলিদের প্রতি। লায়লা মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলেন যেভাবেই হোক পবিত্র ভূমি ফিলিস্তিন ইসরাইলিদের দখলদারি থেকে উদ্ধার করবেন।
সেই প্রতিজ্ঞা লায়লা খালেদ তার তারুণ্যে এসে বাস্তবতায় রূপ দেন।
দিনটি ছিল ১৯৬৯ সালের ২৯ আগস্ট। রোম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানের জন্য অপেক্ষমান অন্য যাত্রীদের সঙ্গে বসে আছে গৌরবর্ণের গোলগাল চেহারার শান্তশিষ্ট এক আরব তরুণী। ভেতরে ভেতরে তরুণীর উত্তেজনায় ফেটে গেলেও চেহারায় তার বিন্দুমাত্র স্পর্শ নেই। তরুণীটির নাম লায়লা খালিদ।
তার শরীরে স্বয়ংক্রিয় বোমা ও অস্ত্র লুকিয়ে রেখেছে। একটু দূরেই বসে আছে এক আরব যুবক। নিউইয়র্ক থেকে আসা টিডব্লিউএ ৮৪০:৭০৭ বোয়িং বিমানটি বিমানবন্দরে অবতরণ করবে তেলআবিবে। লায়লা আর তার সহযোগী এই বিমানটির জন্যেই বসে আছে।
নির্ধারিত সময়ে ৭০৭ বোয়িং বিমানটি ১৪০ জন যাত্রী। মূল স্বীকার আইজ্যাক ইসরাইলি সাবেক প্রধানমন্ত্রী রবিন এই বিমানে আসেননি।
টার্গেট মিস হয়ে গেলেও তারা সিদ্ধান্ত নেয় বিমান ছিনতাই করবেই। পুরো বিশ্বে একটা হইচই ফেলা দিয়ে বিশ্বকে জানিয়ে দেওয়া যাবে, ফিলিস্তিনিরা তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য যে কোনো ভয়ঙ্কর পন্থা অবলম্বন করতেও পিছপা হয় না। পাইলটের কাঁধে অস্ত্র তাক বলেন, অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে আমরা আপনাদের দুঃসংবাদ দিচ্ছি যে বিমানটি এখন ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী মানুষের সংগঠন পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অফ প্যালেস্টাইন (পিএফএলপি)-এর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ।
মুহূর্তেই পুরো দুনিয়ায় চাউর হয়ে গেল ফিলিস্তিনি এক নারীর দুঃসাহসিক অভিযানের কথা। ইসরায়েলি দুই যাত্রীকে আটক করে বাকিদের ছেড়ে দিল। পরবর্তী সময়ে এই দুই ইসরায়েলিকে জিম্মি করে ইসরাইলের সঙ্গে বন্দি বিনিময় করে
দ্বিতীয় বার ছিল ১৯৭০ সালে। ইসরায়েলি আরেকটি বিমান। বিমানের আরোহী ছিলেন ইসরাইলের বড় এক জেনারেল। জেনারেলকে বিমানেই হত্যা করেন প্রতিশোধের আগুনে দগ্ধ এই দুঃসাহসী তরুণী। এই অপারেশনের জন্য লায়লা খালিদ প্লাস্টিক সার্জারি করে নিজের মুখের গড়নও পরিবর্তন করে ফেলে। কারণ, এথেন্সের ঘটনায় বিশ্ব মিডিয়ায় লায়লা খালিদ তখন পরিচিত মুখ। পুরো বিশ্ব দ্বিতীয়বারের মতো অবাক হয়েছিল ফিলিস্তিনের এই আগুনকন্যার দুঃসাহস দেখে।
লায়লা খালিদ আজ বার্ধক্যে উপনীত। কিন্তু তার সংগ্রাম আজও থামেনি। নিজের সবটুকু বিলিয়ে আজও তিনি সংগ্রাম করে যাচ্ছেন ফিলিস্তিনকে ইহুদীদের দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত করার জন্য।
বার্ধক্যের দোরগোড়ায় উপনিত অথচ প্রতিবাদের বিমূর্ত স্বরে অটল। দুর্দশার অতলেই এভাবে হাজার হাজার লায়লা খালিদ প্রতিদিন জন্মে ফিলিস্তিনের বুকে।
//এল//