জাতীয়
পাকিস্তানকে কড়াপ্রতিবাদ,হাইকমিশনারকে তলব
পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে প্রস্তাবের এক দিনের মধ্যে মঙ্গলবার ঢাকায় পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে এই বিষয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়।
এরপর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী সাংবাদিকদের বলেন, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। পাকিস্তান পার্লামেন্টে এই ধরনের প্রস্তাব গ্রহণ ঠিক হয়নি।
জাতিসংঘসহ পশ্চিমা বিভিন্ন দেশের ‘চাপ’ উপেক্ষা করে একাত্তরে খুন-ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড বৃহস্পতিবার কার্যকর করে সরকার।
যুদ্ধকালীন গণহত্যায় পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর হিসেবে যারা ছিলেন, তাদের একজন ছিলেন আল বদর সদস্য কাদের মোল্লা।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতা কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান রাজপথে নেমে এর প্রতিবাদ জানায়।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলী খানও বলেন, “বাংলাদেশ হওয়ার আগ পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের একজন অকুণ্ঠ সমর্থক ছিলেন কাদের মোল্লা। তার মৃত্যুতে প্রতিটি পাকিস্তানি শোকার্ত ও মর্মাহত।”
এরপর ‘ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের’ একনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডে উদ্বেগ প্রকাশ করে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে সোমবার একটি প্রস্তাব পাস হয়।
এরপর মঙ্গলবার বিকালে ঢাকায় পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে তলব করে তার কাছে বিষয়টি ব্যাখ্যা চায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ঢাকার এই প্রতিবাদ ইসলামাবাদের জানাতে হাইকমিশনার আফরাসিয়াব মেহেদী হাশমী কুরেশীকে বলা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ এবং পাঞ্জাবের প্রাদেশিক পরিষদে গৃহীত প্রস্তাবের কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
সেইসঙ্গে কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড নিয়ে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলী খানের বক্তব্যের প্রতিবাদও জানিয়েছে ঢাকা।
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থানও পাকিস্তানের হাইকমিশনারের কাছে তুলে ধরা হয়।
পাকিস্তানের এই আচরণকে কূটনীতিক শিষ্টাচারের লঙ্ঘন বলে তার সমালোচনা ইতোমধ্যে এসেছে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর কাছ থেকে।
তিনি মঙ্গলবার সকালে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবে সরকার। এরপর বিকালেই ডেকে পাঠানো হয় পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে।
যুদ্ধাপরাধের বিচারে কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় উল্লেখ করে তাতে নাক না গলাতে পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানান তথ্যমন্ত্রী ইনু।
তিনি বলেন, “তারা যে বিষয়ে কথা বলেছে, তা বাংলাদেশের সম্মানের সঙ্গে জড়িত, এটি দুর্ভাগ্যজনক ও কূটনৈতিক শিষ্টাচার পরিপন্থি।”
অন্যদিকে সুরঞ্জিত বলেন, “আমাদের অবশ্যই বলতে হবে, সার্বভৌম বাংলাদেশের শক্তিশালী স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা এ রায় দিয়েছে। এ ব্যাপারে অন্য কোনো দেশের পার্লামেন্টের সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার নেই। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এর প্রতিবাদ করা উচিত।
“সমস্ত বিশ্বে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জানিয়ে দেয়া উচিত, দীর্ঘ শুনানি শেষে, সব বিচারিক প্রক্রিয়া মেনে আপিল বিভাগের মাধ্যমে এই রায় কার্যকর হয়েছে। টোকিও ট্রায়াল এবং ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালের কনভেনশন অনুযায়ী আইসিটি আইন করা হয়েছে।”
পাকিস্তানের এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে বুধবার ঢাকায় দেশটির দূতাবাস অভিমুখে মিছিলের কর্মসূচি দিয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আন্দোলনরত গণজাগরণ মঞ্চ।