ছবি: ‘শামুক শাহ জিন্দা পীরের মাজার’ প্রাঙ্গণে ‘জিন্দাপীরের মেলা’...
শত শত বছরের পৌরাণিক কাহিনীসমৃদ্ধ ঠাঁকুরগাঁও সদর উপজেলা অবস্থিত ‘শামুক শাহ জিন্দাপীরের মাজার’। যেখানে মানত করলে আর শিন্নি দিলে মনোবাসনা পূরণ হবে এই আশায় ধর্মবর্ণনির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষ ১৯ অগ্রহায়ণ এখানে আসে। দিনটিকে ঘিরে মাজার প্রাঙ্গণে মেলা বসে। যা ‘জিন্দাপীরের মেলা’ নামে পরিচিত। দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার সাতোর ইউনিয়নের চৌপুকুরিয়া গ্রামে এই জিন্দাপীরের মাজারের অবস্থান।
জিন্দাপীরের মেলায় আসা বিরল উপজেলার মঙ্গলপুরের প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ও ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আলম হোসেন বলেন, ‘এখানে মানত করে এসেছি। উপকার হয় তাই এসেছি। অনেকে আসে। আমরা এর আগেও এসেছিলাম।’
ফটকের সামনে টাঙানো বোর্ড থেকে জানা গেছে, শামুক শাহ একজন কামিল আউলিয়া ছিলেন। তিনি পশ্চিম থেকে এ এলাকায় এসে ইসলাম প্রচার করেন। তিনি একদিন তার অনুসারীদের বলেন, ‘তোমরা আমাকে জীবিত অবস্থায় কবর দেবে। আর আট দিনের দিন কবর থেকে আমাকে ওঠাবে।’
অনুসারীরা আট দিনের দিন তাকে কবর থেকে ওঠাননি। একদিন দেরি করার কারণে দেখা যায় কবরের পাশ থেকে অনেক রক্ত বের হয়ে আসছে। ভক্তরা আর তাকে কবর থেকে ওঠাননি। তখন এই জিন্দাপীর মাজারের গোড়াপত্তন হয়।
বর্তমান মাজার ও এর সম্পত্তি ওয়াক্ফ এস্টেট কর্তৃক পরিচালিত হয়।
শামুক শাহ জিন্দাপীর ওয়াক্ফ এস্টেটের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার। এই ওয়াক্ফ এস্টেটের আওতাধীন শামুক শাহ জিন্দাপীর মাজার ভবন, চৌপুকুরিয়া উচ্চবিদ্যালয়, জিন্দাপীর বাজার, জিন্দাপীর জামে মসজিদ ও জিন্দাপীর দারুস সালাম মাদরাস রয়েছে।
ওই এলাকার মুক্তিযোদ্ধা কবিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে শুনে আসছি এই জিন্দাপীরের মাজারের কথা। তবে সঠিক দিনক্ষণ কেউ বলতে পারেননি। শামুক শাহ জিন্দাপীরের পুরো নাম শাহ মাকসুদ শাহ। তার মৃত্যুর পর মাজার এলাকার ২৬ একর জায়গা তৎকালীন জমিদার প্রিয়নাথ দাসচৌধুরীর আমলে ওয়াক্ফ করা হয়। জিন্দাপীর মাজারের অনেক জায়গা বেদখল হয়েছে। আমরা শুনেছি বাংলা ১২২৬ সালের ৮ অগ্রহায়ণ কামিল আউলিয়া চৌপুকুরিয়া ছোট রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। ওই সময় রাস্তার পাশে কয়েকজন ঢুলি ঢোল নিয়ে বসে ছিলেন। এ সময় ঢুলির সঙ্গে কথোপকথন হয় এবং একজন ঢুলির একটা ঢোল ফেটে যায়। তারপর ওই আউলিয়ার পিঠে ছাপ দেখা যায়। তাই ওই ঘটনার স্মরণে প্রতি বছর ৮ থেকে ১৯ অগ্রহায়ণ জিন্দাপীরের মেলা বসে।
চৌপুকুরিয়া গ্রামের আবু সাঈদ সরকার টিটিন আরাজী জানান, কবরে তাকে রাখার পর অনুসারীরা না উঠানোয় নির্ধারিত দিনের পরদিন কবরের পাশ থেকে রক্ত বের হয়ে আসে। আর এই সময় পাশে সৃষ্টি হয় একটি পুকুরের। যেটি এখনো রয়েছে। এই পুকুরের পানি শুকায় না। যারা এই মাজারে বিভিন্ন মানত করে বা শিন্নি দিতে আসত তারা ওই পুকুরের পানি ব্যবহার করে রান্নাবান্না করে ফকিরদের খাওয়াত; যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
জিন্দাপীর মেলার দোকানদার দ্বিজেন্দ্রনাথ ও রমিজউদ্দিন জানান, এই মেলা মাসব্যাপী থাকলে বিক্রি ভালো হতো।
ইউ