![লালন স্মরণোৎসব বন্ধ হওয়ার ঘটনায় প্রতিবাদ ও তীব্র নিন্দা লালন স্মরণোৎসব বন্ধ হওয়ার ঘটনায় প্রতিবাদ ও তীব্র নিন্দা](https://www.womeneye24.com/media/imgAll/2022July/lalon-2502130636.jpg)
সংগৃহীত ছবি
গতকাল বুধবার ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সন্ধ্যায় লালন সংঘের আয়োজনে টাঙ্গাইল মধুপুরে লালন স্মরণোৎসব হওয়ার কথা থাকলেও তা হেফাজতে ইসলাম ও ওলামা পরিষদ (মধুপুর শাখা) এর আক্রমণে বন্ধ করা হয়েছে। আমরা বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পক্ষ থেকে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
গণমাধ্যম মারফত আমরা জেনেছি যে, হেফাজত ইসলাম এবং ওলামা পরিষদ (মধুপুর শাখা) এই দুইটি ইসলামী দল প্রথম থেকেই লালনের এই স্মরণোৎসব নিয়ে নানাবিধ অপতৎপরতা চালিয়েছে। এই দুই ইসলামী উগ্রপন্থী গোষ্ঠী উল্লেখ করেছে লালনের মতাদর্শ নাজায়েজ, কুফরি বা শিরক। তাদের ভাষ্যমতে তারা এই ভ্রান্ত মতাদর্শ মধুপুরে প্রচার করতে দেবে না।
অনুষ্ঠানের আয়োজকরা অনুষ্ঠান করার স্বার্থে লালনের মতাদর্শ নিয়ে কোনো আলোচনা করা হবে না এই মর্মে প্রতিশ্রুতি দিলেও তারা মানেনি। জেলা প্রশাসন আয়োজকদের নিরাপত্তা দেওয়ার বদলে কর্মসুচিটির আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক মোঃ সবুজ মিয়াকে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য অনুষ্ঠান স্থগিত করতে নির্দেশ দেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে লালনের উপরে হামলার ঘটনা এইটিই প্রথম নয়। গত ১ অক্টোবর ২০২৪ সালে ফরিদপুরে লালনের আনন্দধামে “আবনায়ে দারুস সুন্নাহ কাউলীবেড়া” নামের ফেসবুক গ্রুপ থেকে আনন্দধামকে “শিরকি আস্তানা” বলে প্রচার করে হামলা ও ভাঙচুর করার ঘটনা ঘটায়।
আমরা বলতে চাই, গত ৫ই আগট ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে একাধারে মাজারে হামলা, পাঠ্যপুস্তক থেকে আদিবাসী গ্রাফিতি বাদ দেওয়া এবং আদিবাসীদের উপর সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর আমলা, নারীদের ফুটবল খেলায় ‘তৌহিদি জনতা’র ব্যানারে বাঁধা দেওয়া, বইমেলার স্টলে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর হামলা, এই প্রতিটি ঘটনার ধারাবাহিকতায় আজকে এই লালন স্মরণোৎসব স্থগিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। অথচ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে এই হামলাগুলো যারা করছে তাদের বিচারের আওতায় আনার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছেনা। লালনের আনন্দধামে ভাঙচুরের ঘটনার পরে কেবল একটি মামলা হলেও সেই মামলার অগ্রগতি আমরা কেউই পরিষ্কারভাবে জানিনা। বরং আমরা পর্যবেক্ষণ করছি যে, অন্তঃবর্তীকালীন সরকার প্রথম থেকেই এই গোষ্ঠীর মবোক্রেসিকে উস্কে দিয়েছে। জনগণের স্বার্থবিরোধী এই গোষ্ঠী কার মদদে এই হামলাগুলো চালাচ্ছে এবং কেনই বা সরকার সেখানে দৃশ্যমান উদ্যোগ নিচ্ছে না, তা আমাদের মনে এই সরকারের অবস্থান নিয়ে ব্যপক উদ্বেগ ও সংশয় তৈরি করেছে।
অবিলম্বে লালন স্মরোণৎসবকে ঘিরে যে অপতৎপরতা করা হলো তার দায় মধুপুর প্রশাসনকে নিতে হবে এবং অপতৎপরকারীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। বাংলাদেশ বহু জাতি, বহু ধর্ম এবং বহু মতাদর্শের দেশ। আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অংশীদার হিসেবে স্পষ্টভাবে বলতে চাই, যারা এই দেশে কেবল একটি মতাদর্শ টিকিয়ে রাখতে চায় তারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে জনগণের সাথে বেঈমানি করছে।
//এল//