![পীরগঞ্জের সব খবর পীরগঞ্জের সব খবর](https://www.womeneye24.com/media/imgAll/2022July/pirganj-thakurgaon-pic-2502121544.jpg)
সংগৃহীত ছবি
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র জনতার উপর হামলা
পীরগঞ্জে আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সহ ৪শ জনের বিরুদ্ধে মামলা
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি ঃ ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতে হামলা, মারপিট ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানোর অভিযাগে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজুওয়ানুল হক বিপ্লব সহ ৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত নামা আরো চার’শ জনকে আসামী করে থানায় মামলা হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার ভোমরাদহ গ্রামের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী এনামুল হক বাদী হয়ে পীরগঞ্জ থানায় এ মামলা দায়ের করেন। পীরগঞ্জ থানার ওসি তাজুল ইসলাম বুধবার বিকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহার সুত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ৪ আগষ্ট পীরগঞ্জ পৌর শহরের পূর্ব চৌরাস্তায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী বাঞ্চাল করতে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক বিপ্লব, ভোমরাদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি হিটলার হক, কুশারীগাঁও গ্রামের শাহজান আলী, মিঠুন আলী, হাসান আলী, আব্দুল হাকিম, মোহাম্মদ রাসেল, হুমায়ুন কবির ও আব্দুল খালেক সহ অজ্ঞাতনামা তিন থেকে চার’শ জন আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার উপর হামলা চালায়। এ সময় অসংখ্য ছাত্র জনতাকে মারপিট করে রক্তাক্ত জখম করা হয়। ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকায় ত্রাসও সৃষ্টি করেন হামলাকারীরা। এ সময় মামলার বাদী এনামুল হকও হামলার শিকার হন। ঘটনার ৬ মাস পর গত ১০ ফ্রেবুয়ারী পীরগঞ্জ থানায় মামলা করেছেন তিনি।
পীরগঞ্জ থানার ওসি তাজুল ইসলাম জানান, ৪ আগষ্টে দলবদ্ধ হয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার উপর হামলা, মারপিট ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানোর অভিযোগে থানায় দন্ড বিধি এবং ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আইনের ৩ ধারায় থানায় একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। মামলার আসামীদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।
পীরগঞ্জে ডায়াবেটিস হাসপাতাল পরিচালনায় সীমাহীন দূর্নীতির অভিযোগ ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে ডায়াবেটিক সমিতি ও ডায়াবেটিস হাসপাতাল পরিচালনায় সীমাহীন অনিয়ম, দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ তদন্তে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সমাজ সেবা দপ্তর। উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমান সহ বিভিন্ন সুধীজনদের গন আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৬ ফেব্রুয়ারী সমাজ সেবা অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের প্রবেশন আফিসার নাজমুজ সাকিবকে প্রধান করে এ তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে ৭ কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ঠাকুরগাঁও শহর সমাজসেবা কার্যালয়ের সমাজ সেবা কর্মকর্তা শাকিল মাহমুদ ও জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ে সংযুক্ত পৌর সমাজ কর্মী অক্ষয় কুমার রায়।
জেলা সমাজ সেবা কার্সালয়ের উপ-পরিচালক সহ বিভিন্ন দপ্তরে দায়ের করা গত ৩ র্ফেরুয়ারীর গন আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০০৩ সালে পীরগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতি গঠন করা হয়। এর পর এ সমিতির আওতায় পীরগঞ্জ ডায়াবেটিস হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়। স্থানীয় ব্যক্তিবর্গের আনুদান ও সরকারী-বেসরকারী সহায়তায় ডায়াবেটিস হাসপাতালের কার্যক্রম চলতে থাকে। সকলের সহযোগীতায় ডায়াবেটিস হাসপাতালটি কার্যক্রম বিকশিত হতে থাকলে ২০০৭ সালে ডায়াবেটিক সমিতির প্রতিষ্ঠাকালিন সদস্যদের অনেককেই বাদ দিয়ে সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা ফয়জুল ইসলাম নিজের পছন্দের লোকজন দিয়ে মনগড়া কমিটি দেখিয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা সমাজ সেবা দপ্তর থেকে পীরগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতির নিবন্ধন নেন। যার নিবন্ধন নং-২৩০/০৭। এর পর সমাজ সেবা অধিদপ্তরের আওতায় ৮ কোটিরও অধিক টাকায় পীরগঞ্জ ডায়াবেটিস হাসপাতালের তিনতলা ভবন নির্মান করা হয়। হাসপাতালে সরকারী ভাবে মুল্যবান যন্ত্রপাতি সহ একটি আধুনিক এ্যম্বুলেন্স সরবরাহ করা হয়। যেখান থেকে সাধারণ পযাপ্ত সুফল পাওয়ার কথা। কিন্তু ফয়জুল ইসলামের স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়মর- দ্যুর্নীতি এবং একক ভাবে ডায়াবেটিক সমিতি ও ডায়াবেটিস হাসপাতাল পরিচালনার কারণে সাধারণ মানুষ সে সুফল পাচ্ছে না। বাক্্র বন্দি করে রাখা হয়েছে হাসাপাতালের মুল্যবান যন্ত্রপাতি। সমিতি ও হাসপাতালকে ব্যক্তি সম্পদে পরিণত করেছেন তিনি। দুই বছর পর পর নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করার নিয়ম থাকলেও প্রায় দেড় যুগ ধরে পীরগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতির অনুমোদিত কোন কমিটি নাই। কমিটি গঠন ও অনুমোদন করা সহ রেজিষ্ট্রেশন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া জন্য জেলা সমাজ সেবা কার্যালয় থেকে ২০২২ সালের ১৮ এপ্রিল এবং সব শেষ ২০২৩ সালের ২০ আগষ্ট ফয়জুল ইসলামকে পত্র দেওয়া হলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি। পত্রে বলা হয় সমিতির নিবন্ধনের পর হতে অর্থাৎ ২০০৭ সাল হতে সব শেষ পত্র দেওয়ার তারিখ (২০২৩ সালের ২০ আগষ্ট) পর্যন্ত সমিতির কোন কমিটি অনুমোদনের জন্য তাদের কাছে জমা করা হয়নি। বার্ষিক অডিট, প্রতিবেদন এবং সাধারণ সভার কোন তথ্য দাখিল করা হয়নি। আবেদনে উল্লেখ করা হয়, মুলত স্ত্রী ও আত্মীয় স্বজন দিয়ে সমিতি ও হাসপাতাল পরিচালনা করছেন ফয়জুল ইসলাম।
এ বিষয়ে সাবেক এমপি জাহিদুর রহমান বলেন, পীরগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতি ও পীরগঞ্জ ডায়াবেটিস হাসপাতালের কোন কমিটি নাই, আয়-ব্যয়ের কোন হিসাব নাই। ব্যাংক একাউন্ট থাকলেও নিয়মতান্ত্রিক ভাবে ব্যবহার করা হয়নি। শুনেছি সংগৃহীত অর্থ ভুয়া ভাউচার দেখিয়ে পকেটস্থ করা হয়েছে এবং হচ্ছে। সেখানে কোন স্বচ্ছতা বা জবাবদিহিতা নাই। আমরা এর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা চাই।
প্রতিষ্ঠানটির যাকাত ফান্ডের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস জানান, যাকাত ফান্ডের নামে লক্ষাধিক টাকা আদায় করা হলেও বর্তমানে এ ফান্ডে টাকা নাই। টাকা কি করা হয়েছে, তা তারা জানেন না। সমিতি ও হাসপাতালের নামে একাধিক সরকারী, বে-সরকারী উন্নয়ন প্রকল্প প্রদান করা হলেও এর সঠিক কোন হিসাব নেই এবং প্রকল্পের অর্থ কি কাজে ব্যয় করা হয়েছে তা প্রকল্প কমিটির লোকজন জানেন না। জাল স্বাক্ষর করে অধিকাংশ প্রকল্পের অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে।
ইঞ্জিনিয়ার জবাইদুর রহমান জানান, সমিতির গঠনতন্ত্র মোতাবেক প্রায় দেড় যুগ ধরে বার্ষিক অডিট, বার্ষিক প্রতিবেদন কিংবা বার্ষিক সাধারণ সভা করা হয়নি। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি সহ বিভিন্ন দপ্তর থেকে ফ্রিতে পাওয়া ওষুধ ক্রয় দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানের অর্থ তছরুপ করা হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। ফয়জুল সাহেব কাউকে কাগজ পত্র দেখান না। একাই যা ভাল বুঝেন তাই করেন। কাগজে কলমে কি করেছেন তা তিনিই ভাল জানেন।
বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান জীবন বলেন, সরকারী ভাবে সরবরাহ করা অত্যাধুনিক এ্যম্বুলেন্সটি ফয়জুল ইসলাম নিজের ও পরিবারের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন। ভেন্টিলেটর মেশিন সমূহ বাক্্রবন্দি করে রাখা হয়েছে। চালু করা হয়নি কিডনী ডায়ালাইসিস মেশিনও। মুল্যবার এসব যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে। সরকারী অর্থে নির্মিত পীরগঞ্জ ডায়াবেটিস হাসপাতালকে একক সিদ্ধান্তে পীরগঞ্জ ডায়াবেটিস এন্ড জেনারেল হাসপাতাল নাম করণ করেছেন।
ফজলুল কবীর নামে এক ভুক্তভোগী জানান, ডায়াবেটিস হাসপাতালে ডাক্তার, নার্স, কর্মচারী নিয়োগে সীমাহীন দূর্নীতির আশ্রয় নেয়া হয়েছ। প্রতিষ্ঠালগ্নে তার ছেলে স্বেচ্ছা শ্রমে কয়েক বছর হাসপাতালে কাজ করলেও পরবর্তীতে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
অভিযোগ বিষয়ে ফয়জুল ইসলামের মতামত চাওয়া হলে মোবাইল ফোনে তিনি জানান, ডায়াবেটিক সমিতি ও হাসপাতালের কমিটি সহ অন্যান্য কাগজ পত্র ঠিক আছে। তবে নিবন্ধন কতৃপক্ষের অনুমোদন নাই। সমাজ সেবা অধিদপ্তর অনুমোদন করেনি।
জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আল মামুন জানান, সমিতির কমিটি সহ অন্যান্য কাগজ পত্র দপ্তরের দাখিল করার জন্য একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। ফয়জুল সাহেব তা আমলে নেননি। গন আবেদন পাওয়ার পর আবেদনে উল্লেখিত বিষয়গুলি তদন্তে তাদের পক্ষ থেকে ৩ সদস্য বিশিষ্ঠ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে অভিযোগ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) এন, এম ইসফাকুল কবীর বলেন, ডাকযোগে একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
পীরগঞ্জে আইন শৃংখলা স্থিতিশীল রাখতে সভা
ঠাকুরগাঁওয়ে পীরগঞ্জে আইন শৃংখলা স্থিতিশীল রাখতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে সভা হয়েছে।
শনিবার দুপুরে পীরগঞ্জ থানা পুলিশের আয়োজনে থানার গোলঘড়ে এ সভা হয়। থানার অফিসার ইনচার্জ তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য দেন, উপজেলা জামায়াতের আমীর বাবলুর রশিদ, উপজেলা কমিউনিষ্ট পার্টির সভাপতি প্রভাত সমির শাহজাহান আলম, উপজেলা যুবদলের সভাপতি নজমুল হুদা মিঠু, পীরগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি জয়নাল আবেদিন বাবুল, উপ-পুলিশ পরিদর্শক আব্দুল হালিম, উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল ইসলাম রানা, উপজেলা কমিউনিষ্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক মুর্তজা আলম, ছাত্র ইউনিয়নের নেতা আবু সালেহ সিহাব, লেলিন, ছাত্রদল নেতা সূর্য প্রমূখ। এ সময় জামায়াতে ইসলামী, কমিউনিষ্ট পার্টি, যুবদল, ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়নের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ সহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
//এল//