ছবি সংগৃহীত
উত্তরবঙ্গের অন্যতম বৃহত্তম বিনোদনকেন্দ্র স্বপ্নপুরীর ভেতরে মিনি চিড়িয়াখানায় সরকারি অনুমোদন না নিয়ে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের অভিযোগে ৭৪টি বন্য প্রাণী জব্দ করেছে বন অধিদপ্তর। জব্দ করা বন্য প্রাণীর তালিকায় কুমির, অজগর, ভালুক, হরিণসহ ২২ ধরনের প্রাণী রয়েছে।
২৬ বেলা দুইটার দিকে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার খালিপপুর এলাকায় স্বপ্নপুরী বিনোদনকেন্দ্র ও মিনি চিড়িয়াখানায় অভিযান চালায় বন অধিদপ্তর। সংস্থাটির বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের বন্য প্রাণী পরিদর্শক আবদুল্লাহ আস সাদিক ও অসীম মল্লিকের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানের সময় সামাজিক বন বিভাগ দিনাজপুরের সহকারী বন সংরক্ষণ মিজ নুরুন্নাহার, নবাবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবদুল মতিন, আফতাবগঞ্জ পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ সিরাজুল হক ও সামাজিক বন বিভাগের নবাবগঞ্জের বিট কর্মকর্তা খায়রুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জব্দ করা প্রাণীর মধ্যে আছে ৩টি অজগর, ৪টি কুমির, ৪টি এশিয়াটিক কালো ভালুক, ১৭টি সাম্বার হরিণ, ৫টি মায়া হরিণ, ৩টি কচ্ছপ, ১২টি বানর, ২টি মুখপোড়া হনুমান, ৫টি রাজধনেশ, ৫টি বেগুনি কালিম, ১টি বক, ৪টি মদনটাক, ২টি বেবুন, ১টি উল্লুক, ১টি চিতা বিড়াল, একটি করে শঙ্খচিল, ভুবন চিল, ইগল, পাকড়া ধনেশ ও ভোঁদড়।
বন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সরকারি অনুমোদন না নিয়ে মিনি চিড়িয়াখানায় বন্য প্রাণী সংরক্ষণের অভিযোগে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন ২০১২–এর ৩২ ধারা অনুযায়ী এসব বন্য প্রাণী জব্দ করা হয়। এসব বন্য প্রাণীর সপক্ষে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কোনো অনুমতিপত্র দেখাতে পারেনি স্বপ্নপুরী বিনোদনকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। তবে কুমির, কচ্ছপ, সাম্বার হরিণসহ ৫২টি প্রাণীর পক্ষে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমতিপত্র আছে বলে দাবি করেছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। তখন আগামী চার দিনের মধ্যে অনুমতিপত্র উপস্থাপনের জন্য চিড়িয়াখানার কিউরেটর মোস্তাফিজুর রহমানের জিম্মায় প্রাণীগুলো দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে বন্য প্রাণী পরিদর্শক আবদুল্লাহ আস সাদিক বলেন, গোপন সূত্রে স্বপ্নপুরী বিনোদনকেন্দ্র ও মিনি চিড়িয়াখানায় অনুমোদনহীন বন্য প্রাণী থাকার খবর পেয়ে তাঁরা অভিযান চালান। অভিযানে সেখান থেকে ৭৪টি বন্য প্রাণী জব্দ করা হয়েছে। তবে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে ৫২টি প্রাণীর সপক্ষে অনুমতিপত্র আছে। এ জন্য চার দিনের সময় দিয়ে ওই ৫৪টি প্রাণী কিউরেটরের জিম্মায় রাখা হয়েছে। চার দিনের মধ্যে অনুমতিপত্র জমা দিতে না পারলে সেগুলোও নিয়ে যাওয়া হবে। জব্দ করা অন্য ২২টি বন্য প্রাণী গাজীপুর সাফারি পার্কে নেয়া হচ্ছে। প্রাণীগুলো পার্কের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর উপযুক্ত হলে উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
১৯৮৯ সালে নবাবগঞ্জের খালিপপুর গ্রামে প্রায় ৪০০ বিঘা জমির ওপর স্বপ্নপুরী বিনোদনকেন্দ্র ও মিনি চিড়িয়াখানা গড়ে তোলেন দিনাজপুর-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ও তাঁর ভাই দিনাজপুর জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান দেলওয়ার হোসেন। সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমানের মৃত্যুর পর বর্তমানে বিনোদনকেন্দ্রের যৌথ মালিক সাবেক সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক ও তাঁর চাচা দেলওয়ার হোসেন।
ইউ
